যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র দাবদাহ, রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা: জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত?
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে তীব্র গরম শুরু হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহজুড়ে আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, একটি শক্তিশালী ‘হিট ডোম’-এর কারণে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড তৈরি করতে পারে। দেশটির প্রায় দেড় কোটি মানুষ এরই মধ্যে তীব্র গরমের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফ্লোরিডার কিছু অংশ পর্যন্ত এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষের জন্য গরমের তীব্রতা ৪-এর মধ্যে ৩ মাত্রায় রয়েছে। এর মানে হলো, পর্যাপ্ত শীতল ব্যবস্থা এবং জল গ্রহণ না করলে যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বেশি হতে পারে এবং তা ৯০-এর ঘরে পৌঁছতে পারে। আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম আরও তীব্র অনুভূত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চ চাপের কারণে ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে গরম ও আর্দ্র বাতাস যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসছে। এর ফলেই গরম এত তীব্র হচ্ছে এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে।
আগামী সপ্তাহান্তে টেক্সাসের কিছু অংশ থেকে শুরু করে মধ্য-পশ্চিম, মধ্য-আটলান্টিক এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘হিট ডোম’ বিস্তৃত হতে পারে। সেন্ট লুইস, শিকাগো, নিউইয়র্ক সিটি এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো শহরগুলোতে তীব্র গরমের কারণে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
শুক্রবার ডেনভারে তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছতে পারে, যা একটি রেকর্ড হতে পারে। শিকাগোতে শনি ও রবিবার তাপমাত্রা যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
নিউইয়র্ক সিটিতে সোমবার ও মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৯৫ ও ৯৬ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড করা হতে পারে, যা আগের রেকর্ডগুলো ভাঙতে পারে। বোস্টনেও তাপমাত্রা বেড়ে ৯২ থেকে ৯৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার ১৫০টির বেশি দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙতে পারে। এর মধ্যে গরমের রেকর্ড যেমন রয়েছে, তেমনই উষ্ণ রাতের রেকর্ডও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গরম আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর গড়ে ৮০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। গরমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, বিশেষ করে যাদের শরীর ঠান্ডা রাখার মতো ব্যবস্থা নেই।
রাতে তাপমাত্রা কমতে না চাওয়ায় শরীর ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ পায় না, ফলে অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন গ্রীষ্মকাল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। ২১ জুন গ্রীষ্মের শুরু চিহ্নিত করা হয়, যখন সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমের এই তীব্রতা সম্ভবত একটি পূর্বাভাস মাত্র। সাধারণত জুলাই ও আগস্ট মাসেই বছরের সবচেয়ে গরম সময় থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। উন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা চললেও, এর প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বে।
আমাদের দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশেও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়ছে, যা জনজীবন ও কৃষির জন্য উদ্বেগের কারণ।
সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গরম থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে।
এছাড়া, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: মার্কিন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে।