নেদারল্যান্ডসের হেগে আসন্ন ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে শহরটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আগামী ২৪ ও ২৫শে জুন এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সামরিক এবং পুলিশের বিশাল বহরের উপস্থিতিতে হেগ শহরটি কার্যত একটি দুর্গে পরিণত হয়েছে। সাধারণত শান্তিপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত হেগে ন্যাটোর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘অরেঞ্জ শিল্ড’ নামে পরিচিত একটি বিশাল নিরাপত্তা অভিযান চলছে। এর ফলস্বরূপ, শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহরটির স্বাভাবিক চিত্র এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
ন্যাটো মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের থেকে শুরু করে তাদের আবাসস্থল পর্যন্ত সামরিক পুলিশ এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া, আকাশপথে নজরদারির জন্য সামরিক ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দেওয়া নেতাদের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ২৭,০০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা দেশটির মোট পুলিশ বাহিনীর প্রায় অর্ধেক। এছাড়াও, ১০,০০০ এর বেশি প্রতিরক্ষা কর্মীও এই নিরাপত্তা অভিযানে যুক্ত আছেন। নিরাপত্তা বাহিনী আকাশপথে টহল দেবে এবং বোম্ব স্কোয়াড বিস্ফোরক দ্রব্য খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালাবে।
এই সম্মেলনের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। হেগের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ, ‘গ্যাস্ট্রোবার বার্লাজ’-এর মালিক জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বিধিনিষেধের কারণে তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ধারণা করছেন, এই ক্ষতির পরিমাণ ১৫০০০০ ইউরোর বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার সমান। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে অনেকেই শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা নেতারা মঙ্গলবার রাতে ডাচ রাজার প্রাসাদে নৈশভোজে অংশ নেবেন। এরপর বুধবার তাদের মূল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে দেশগুলো একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।
হেগ শহরটি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা এবং শান্তির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে আন্তর্জাতিক আদালত এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত। এই শীর্ষ সম্মেলনের কারণে শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে যে ব্যাঘাত ঘটছে, তা স্থানীয় জনগণের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস