শিরোনাম: ২১ বছর বয়সে বিশ্ব ভ্রমণে, প্রচলিত পথ ছেড়ে নতুন দিগন্তের সূচনা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর, অনেকেই যখন একটি স্থিতিশীল ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখে, ঠিক তখনই ২১ বছর বয়সী তালিয়া স্ক্রাইবার বেছে নিয়েছিলেন এক ভিন্ন পথ। প্রচলিত ধারণাকে দূরে ঠেলে, তিনি বেরিয়ে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে।
গত এক বছরে তিনি পাড়ি দিয়েছেন বহু দেশ, কাটিয়েছেন প্রতিটি রাত এক নতুন ঠিকানায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা তালিয়ার এই যাত্রার শুরুটা হয় টিকটকের একটি ভিডিও থেকে, যেখানে একজন নারী মেক্সিকোতে একা ভ্রমণ করছিলেন। সেই ভিডিওটি তাকে এতটাই অনুপ্রাণিত করে যে, ভ্রমণের নেশা যেন তার রক্তে মিশে যায়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
নিজের ভেতরের ‘ভ্রমণ পিপাসু’ সত্তাকে সঙ্গী করে, তিনি একা বেরিয়ে পড়েন অজানা পথে।
অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী হওয়া সত্ত্বেও, তালিয়া ক্লাসরুমের চেয়ে বেশি কিছু শিখেছেন ভ্রমণের মাধ্যমে। ভ্রমণের খরচ যোগাতে তিনি বেছে নিয়েছেন নানা উপায়।
কখনও কুকুরদের দেখাশোনা করেছেন, কখনও বা বাড়ি পরিষ্কারের কাজ করেছেন। এছাড়া, অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করে এবং হোস্টেলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেও তিনি অর্থ উপার্জন করেছেন।
বর্তমানে, তালিয়া তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন। ভ্রমণ বিষয়ক কনটেন্ট তৈরি করে তিনি অনুসারীদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেছেন। এমনকি, তিনি ‘গো গ্রানোলা’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন, যেখানে তিনি ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য দলবদ্ধ ভ্রমণের আয়োজন করেন।
গত কয়েক মাসে, তালিয়া ভ্রমণ করেছেন ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, মরক্কো এবং পর্তুগালের মতো বিভিন্ন দেশে। তার ভাষায়, তিনি এখন একজন ‘ফুলটাইম যাযাবর’। হোস্টেলের উচ্চমূল্যের কারণে, তিনি সমুদ্র সৈকতে, এমনকি জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়েও রাত কাটিয়েছেন।
তবে, একা ভ্রমণ করা সবসময় সহজ ছিল না। তালিয়া জানিয়েছেন, অপরিচিত পরিবেশে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা তার জন্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, “ভয়কে আমি আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে দিই না।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে আমি শিখেছি নিজের অন্তর্দৃষ্টিকে বিশ্বাস করতে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।
ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তালিয়া জানান, তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৮৯৮ মার্কিন ডলার খরচ করেন। তিনি আরো যোগ করেন, “আমি কম খরচ করে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য জীবনকে সাজিয়েছি।
বিনামূল্যে থাকার জন্য হোস্টেলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি, স্থানীয় খাবার খাই, ঝর্ণায় সাঁতার কাটি এবং প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাই।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে মানুষের প্রতি তার অগাধ আস্থা রয়েছে। তিনি মনে করেন, “ভ্রমণের সময় আপনি সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন।
স্থানীয়রা আপনাকে তাদের বাড়িতে থাকার সুযোগ দেয়, বিনামূল্যে খাবার খাওয়ায়। মানুষের সাহায্য করার মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করে।
তালিয়ার মতে, বিশ্ব ভ্রমণ ভয়ের কিছু নয়, বরং এটি জীবনকে নতুনভাবে দেখার একটি সুযোগ। যারা একাকী ভ্রমণের কথা ভাবছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নিজেকে সুরক্ষিত রেখে, বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত নিলে এই পৃথিবীটা ততটা ভয়ের নয়, যতটা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখি।
তথ্য সূত্র: পিপলস