পাহাড়ে দৌড়, স্তন্যপান: মা হয়েও আলট্রাম্যারাথন জয়!

মা ও দৌড়বিদ: স্তন্যপান করানোর সময়ে ১০০ কিলোমিটারের আলট্রাম্যারাথন জয়।

নারী মানেই যেন ত্যাগের প্রতিমূর্তি। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলে নারীর এগিয়ে চলা এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।

তবে মা হওয়ার পর একজন নারীর জীবনযাত্রা কেমন হয়, তা নিয়ে সমাজের কিছু আলাদা ধারণা রয়েছে। সম্প্রতি তেমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্টেফানি কেস।

যিনি কিনা মা হওয়ার পরেও ১০০ কিলোমিটারের আলট্রা-ম্যারাথন দৌড়ে জয়ী হয়েছেন।

ওয়েলসের পাহাড়ি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ‘আলট্রা-ট্রেইল স্নোডোনিয়া’ নামক এই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন স্টেফানি।

দৌড়ানোর সময়ে তিনি তার ছয় মাস বয়সী মেয়ে, পেপারকে স্তন্যপান করিয়েছেন।

দৌড় প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত একটি স্থানে মেয়ের দুধ পানের জন্য তিনি অনুমতিও নিয়েছিলেন।

এই কঠিন দৌড় শেষ করার পর যখন জানা যায়, স্টেফানি নারীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, তখন তিনি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

কারণ, দৌড় শুরু করার সময় তিনি এলিট দৌড়বিদদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। এমনকি দৌড়ের মাঝে তিনবার থেমে মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে তার মোট সময়ও বেড়ে গিয়েছিল।

এই সাফল্যের পর স্টেফানি জানান, ছবিগুলো প্রমাণ করে যে মা হওয়ার পরে জীবন থেমে যায় না, বরং এটি একজন মানুষের পরিচয়ের আরও একটি দিক।

তিনি আরও বলেন, নতুন মায়েদের জানা উচিত যে তাদের পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিজেদের অগ্রাধিকার দেওয়া ঠিক।

কারণ, এটি তাদের ভালো অভিভাবক করে তুলবে।

স্টেফানির কথায়, মা হওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে একটি।

তাই দৌড়ানোর মতো কিছু বিষয় যদি একজন মায়ের থাকে, যা তাকে মনে করিয়ে দেয় যে সবকিছু পরিবর্তন হলেও তার পরিচয়ের কিছু দিক এখনও একই আছে, তবে এতে খারাপ কিছু নেই।

আসলে, প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম ম্যারাথন শেষ করার পরেই স্টেফানির আলট্রা-দৌড় শুরু হয়।

খেলাটির প্রতি ভালো পারফর্ম করার কারণে তিনি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাতেও দৌড়েছেন।

তবে সন্তান ধারণের চেষ্টার সময় কয়েকবার গর্ভপাতের কারণে তিনি প্রায় তিন বছর খেলা থেকে দূরে ছিলেন।

এই বিষয়ে স্টেফানি জানান, দৌড় তার কাছে মানসিক শান্তির পরিবর্তে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এরপর, পেপারের জন্ম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুস্থ হয়ে তিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর আবার দৌড় শুরু করেন।

এই দৌড়ের শুরুতে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তার জন্য যেন আশীর্বাদস্বরূপ ছিল।

কারণ, এতে তার উপর পারফর্ম করার কোনো চাপ ছিল না।

যদিও প্রতিযোগিতায় ২০ এবং ৮০ কিলোমিটারে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু স্টেফানি আগে থেকেই জানতেন, তাকে তার মেয়ের জন্য আরও একবার থামতে হবে।

তাই তিনি ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি মেয়ের দুধ পানের জন্য সাহায্য চেয়ে অনুমতি নিয়েছিলেন।

স্টেফানির কথায়, এই সময়ে তার সঙ্গী জন কেবল পেপারকে তার কাছে দিতে পারতেন।

জন তাকে বোতল বা অন্য কোনো খাবার দিতে পারতেন না।

সবকিছু তাকে একা সামলাতে হয়েছে।

এর সঙ্গে পেপারের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও ছিল।

তবে, এই জয়ের পর তিনি বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের শিকারও হয়েছেন।

কেউ কেউ তাকে সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি মেয়ের জন্য যথেষ্ট সময় দেন না।

আবার অনেকে তার বয়স এবং চেহারার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন।

তবে স্টেফানির মতে, একজন নতুন মা হিসেবে সমাজে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে সমালোচিত হতে হয়।

আমাদের নিজেদের পথ খুঁজে বের করতে এবং মাতৃত্ব কেমন হবে, তা নিজেরাই ঠিক করতে হবে।

তার জন্য, ১০০ কিলোমিটার দৌড়ানো যেমন আনন্দের, তেমনই অন্যদের জন্য এটি ৫ কিলোমিটার দৌড়ানো বা একটি বইয়ের ক্লাব তৈরি করার মতো হতে পারে।

বর্তমানে, স্টেফানির পরবর্তী লক্ষ্য হল ‘হার্ডরক ১০০’।

এটি জুলাই মাসে কলোরাডোতে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ১০০ মাইল দৌড়াতে হবে।

সবশেষে স্টেফানি বলেন, একজন নারীর পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

যদি কোনো নারী চায়, তবে সবকিছু করতে পারে।

তাদের জন্য সমর্থন, উৎসাহ এবং সুযোগ থাকা দরকার।

তবে, তা করার জন্য তাদের বাধ্য করা উচিত নয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *