কেথ রানিয়ারের এখন কী হচ্ছে? এনএক্সআইভিএম নেতার জেল জীবনের অজানা দিক

**NXIVM-এর গুরু কিথ রানিয়ের: প্রতারণা ও যৌন শোষণের এক অন্ধকার অধ্যায়**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল আলোচিত একটি ঘটনা হলো এনএক্সআইভিএম (NXIVM) নামক একটি গোষ্ঠীর কার্যকলাপ। নিজেকে “ভ্যানগার্ড” হিসেবে পরিচয় দেওয়া কিথ রানিয়ের ছিলেন এই গোষ্ঠীর প্রধান। সম্প্রতি, এই রানিয়ের-কে যৌন শোষণ, প্রতারণা, এবং মানব পাচারের অভিযোগে ১২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এনএক্সআইভিএম-এর শুরুটা হয়েছিল অনেকটা অন্যরকমভাবে। এটি মূলত একটি স্ব-উন্নয়ন এবং নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এর ভেতরের আসল রূপটি উন্মোচিত হতে শুরু করে। অভিযোগ ওঠে, এই সংগঠনের আড়ালে নারীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো, যা ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

তদন্তে জানা যায়, এনএক্সআইভিএম-এর অভ্যন্তরে “ডস” (DOS) নামে একটি গোপন গোষ্ঠী ছিল। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা কিথ রানিয়েরের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতেন। নারীদের কাছ থেকে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, নগ্ন ছবি, ইত্যাদি সংগ্রহ করা হতো, যা তাদের ব্ল্যাকমেল করার কাজে ব্যবহার করা হতো। এছাড়া, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো।

অনেক নারীকে না খেয়ে থাকতে বাধ্য করা হতো, এবং রানিয়েরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হতো।

এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন হলিউডের অভিনেত্রী অ্যালিসন ম্যাক-সহ আরও অনেকে। অ্যালিসন ম্যাক “ডস”-এর সদস্য সংগ্রহে সহায়তা করতেন এবং এর জন্য আর্থিক সুবিধা পেতেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, এই মামলায় নাম জড়িয়েছে বিলিয়নেয়ার উত্তরাধিকারী ক্ল্যারি ব্রনফম্যানের।

২০১৮ সালে মেক্সিকো থেকে রানিয়েরকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। ২০২০ সালের অক্টোবরে তাকে ১২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। রানিয়ের তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, কিন্তু আদালত তার যুক্তিতে রাজি হয়নি।

এই ঘটনার শিকার নারীদের মধ্যে অনেকে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে কিভাবে রানিয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছেন। বিচারকরা এই মামলার রায় দেওয়ার সময় বিষয়টিকে একটি ভয়াবহ প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বর্তমানে রানিয়েরের মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি তার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এই মামলাটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়িয়েছে।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *