বাংলাদেশে ট্রেকিং বা পাহাড় পথে হাঁটা এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর চাহিদা বাড়ছে। পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ থাকায় ট্রেকিং অনেকের কাছেই প্রিয় একটি শখ।
তবে ট্রেকিংয়ের সময় নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকাটা জরুরি। কারণ অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনার শিকার হলে তা বেশ বিপদজনক হতে পারে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন একজন অভিজ্ঞ আউটডোর সেফটি ম্যানেজার, ক্লো ওয়াস্তেনিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
তার মতে, ট্রেকিংয়ের সময় কিছু জরুরি বিষয় মনে রাখা দরকার, যা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে। ওয়াস্তেনিসের পরামর্শগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন, ট্রেকিংয়ের সময় সঙ্গে রাখা দরকার এমন কিছু জরুরি সুরক্ষা সরঞ্জামের বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক:
১. জরুরি সুরক্ষা কম্বল (Emergency Blanket): অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার মোকাবিলার জন্য একটি জরুরি সুরক্ষা কম্বল খুবই প্রয়োজনীয়। ট্রেকিংয়ের সময় আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে রাতের বেলা তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। এই কম্বল শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পারে।
২. হেডল্যাম্প (Headlamp): রাতে পথ খুঁজে বের করার জন্য একটি ভালো হেডল্যাম্প অপরিহার্য। এর মাধ্যমে আপনার হাত দুটিও ব্যবহার করা যায়।
পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায় এমন একটি হেডল্যাম্প নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. জল ফিল্টার (Water Filter): ট্রেকিংয়ের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা খুবই জরুরি। সাধারণত, প্রতি দুই ঘণ্টা ট্রেকিংয়ের জন্য এক লিটার জল সঙ্গে রাখা ভালো।
জলের অভাব হলে শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও, জলের উৎস নিশ্চিত করতে একটি ফিল্টার সঙ্গে রাখা দরকার।
এটি রাস্তার পাশের ঝর্ণা বা অন্য কোনো উৎস থেকে জল সংগ্রহ করার সময় কাজে লাগে।
৪. টুপি (Sun Hat): সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে একটি ভালো সান হ্যাট বা টুপি খুব দরকারি। এটি আপনাকে রোদ থেকে বাঁচাবে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
৫. হুইসেল বা বাঁশি (Whistle): বিপদকালে সাহায্যের জন্য সংকেত পাঠাতে হুইসেল খুবই কার্যকর। কোনো কারণে পথ হারিয়ে গেলে বা আহত হলে, হুইসেল বাজিয়ে দ্রুত অন্যদের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।
৬. দ্রুত শুকনো হওয়া পোশাক (Moisture-Wicking Clothing): ট্রেকিংয়ের সময় আরামদায়ক পোশাক পরা জরুরি। শরীরের ঘাম শুষে নিতে পারে এমন পোশাক (যেমন: টি-শার্ট) ব্যবহার করা ভালো।
৭. ট্রেকিং পোল (Trekking Poles): পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ট্রেকিং পোল ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে, উঁচু-নিচু এবং পাথুরে রাস্তায় এগুলো হাঁটাচলার জন্য খুবই সহায়ক।
৮. মাল্টিটুল (Multi-tool): অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য একটি মাল্টিটুল সঙ্গে রাখা ভালো। সুইস আর্মি ছুরি-র মতো মাল্টিটুলে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে, যা জরুরি অবস্থায় কাজে লাগে।
৯. প্রাথমিক চিকিৎসার কিট (First-Aid Kit): ট্রেকিংয়ের সময় আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি ফার্স্ট-এইড কিট অবশ্যই সঙ্গে রাখা উচিত। কিটে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক, ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
১০. পোকামাকড় তাড়ানোর স্প্রে (Insect Repellent): পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১১. উপযুক্ত পোশাক (Waterproof Jacket): আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে উপযুক্ত পোশাক, যেমন – জলরোধী জ্যাকেট সঙ্গে রাখা দরকার। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এটি খুব কাজে আসে।
১২. বন্যপ্রাণী থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ট্রেকিংয়ের সময় ভালুক বা অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর আক্রমণের তেমন সম্ভবনা না থাকলেও সাপ, বানর বা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সাথে দেখা হতে পারে।
তাই তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং তাদের বিরক্ত না করার জন্য সচেতন থাকতে হবে।
ট্রেকিংয়ের আগে অবশ্যই আপনার গন্তব্য সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
ট্রেকিংয়ের সময় পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং বিশ্রাম নিন। কোনো সমস্যা হলে দ্রুত অন্যদের জানান।
নিরাপদ ট্রেকিংয়ের জন্য প্রস্তুতিই মূল মন্ত্র।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার