বস্টন পুলিশের এক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত কারেন রিড অবশেষে মুক্তি পেলেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে, দ্বিতীয় বিচারের রায়ে তিনি অধিকাংশ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
তবে, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে, বস্টন পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা জন ও’কীফের মৃত্যুর ঘটনায় কারেন রিডকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
ঘটনার দিন রাতে, তারা বন্ধুদের সাথে একটি বারে যান। এরপর, ও’কীফকে ক্যান্টন, ম্যাসাচুসেটস-এ অবস্থিত বন্ধু ব্রায়ান অ্যালবার্টের বাড়িতে নামিয়ে দেন রিড।
অভিযোগ ছিল, রিড মদ্যপ অবস্থায় ও’কীফকে তার গাড়ি দিয়ে চাপা দেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তদন্তে জানা যায়, ও’কীফের মৃতদেহ অ্যালবার্টের বাড়ির সামনে তুষারের মধ্যে পাওয়া যায়। এই ঘটনায় রিডকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
রিড অবশ্য শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি পুলিশের তদন্তের ত্রুটি এবং একটি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।
তার আইনজীবীরা দাবি করেন, ও’কীফকে আসলে অ্যালবার্টের বাড়িতে মারধর করা হয়েছিল এবং পরে বাইরে ফেলে রাখা হয়।
মামলার শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউশন, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ, রিডের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করে।
তাদের মূল যুক্তি ছিল, রিড মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং ও’কীফকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছেন। অন্যদিকে, রিডের আইনজীবীরা দাবি করেন, ও’কীফের শরীরে গাড়ির আঘাতের চিহ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আঘাত ছিল না।
তারা পুলিশের তদন্তের দুর্বলতা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করার অভিযোগ করেন।
২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রথম বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিচারকেরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় জুলাই মাসে তা বাতিল হয়ে যায়।
এরপর, রিডের দ্বিতীয় বিচার শুরু হয় ২০২৫ সালের এপ্রিলে। দীর্ঘ শুনানির পর, বিচারক মণ্ডলী রিডকে হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন।
তবে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এই মামলার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রিডের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা মাইকেল প্রক্টর, অ্যালবার্ট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যা একটি পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের ইঙ্গিত দেয়।
প্রক্টরের কিছু বিতর্কিত বার্তা ফাঁস হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয় এবং পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
কারেন রিডের এই মামলার রায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে, পুলিশের তদন্তের দুর্বলতা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করার অভিযোগ এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগায়। বর্তমানে, রিড তার পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করছেন।
তথ্য সূত্র: পিপল