শিরোনাম: টেকসই ফ্যাশনের গুরুত্ব: প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট ব্ল্যানচেট-এর উদ্যোগে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা
টেকসই ফ্যাশন (Sustainable fashion) –এর গুরুত্ব বোঝাতে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেন প্রিন্স উইলিয়াম এবং খ্যাতিমান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তাঁরা ইংল্যান্ডের নরউইচে (Norwich) অবস্থিত ‘কালারিফিক্স’ (Colorifix) নামক একটি প্রতিষ্ঠানে যান। এই প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে রং তৈরির এক অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
কালারিফিক্স-এর মূল উদ্ভাবন হলো ডিএনএ সিকোয়েন্সিং (DNA sequencing) প্রযুক্তির ব্যবহার। তারা প্রাকৃতিক উপাদানে বিদ্যমান রং শনাক্ত করে, সেই রঙের ডিএনএ কোড ব্যবহার করে কারখানায় রং তৈরি করে। এর ফলে, ঐতিহ্যবাহী রং তৈরির পদ্ধতিগুলোর তুলনায় অনেক কম পানি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, নীল রং তৈরির জন্য সাধারণত যে বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়, কালারিফিক্স-এর পদ্ধতিতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।
প্রিন্স উইলিয়াম-এর ‘আর্থশট প্রাইজ’ (Earthshot Prize) প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর্থশট প্রাইজ হলো পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নেওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যা বিভিন্ন উদ্ভাবনী সমাধানকে উৎসাহিত করে। কালারিফিক্স-এর এই প্রযুক্তি ‘বিল্ড এ ওয়েস্ট ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ (Build a Waste Free World) বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
এই খবরটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের (Garment Industry) অবদান অনস্বীকার্য। প্রতি বছর এই শিল্প বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। কিন্তু একই সঙ্গে, এই শিল্পের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো পরিবেশ দূষণ। বিশেষ করে, রং তৈরির সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে পানি ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
কালারিফিক্স-এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব, তেমনি পানির ব্যবহার কমিয়ে উৎপাদন খরচও কমানো যেতে পারে। এতে করে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে।
প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট ব্ল্যানচেটের এই উদ্যোগ, টেকসই ফ্যাশনের ধারণাটিকে শুধু প্রচারের আলোয় আনেনি, বরং এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আশা করা যায়, কালারিফিক্স-এর মতো আরও অনেক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আমাদের দেশের পোশাক শিল্পকে আরও উন্নত করবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: পিপল