ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্সেস কেট ও প্রিন্স উইলিয়াম-এর মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে সম্প্রতি। বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালে মারা যান কিশোরী ফটোগ্রাফার লিজ হাটন। তার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছিলেন কেট ও উইলিয়াম, যা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
লিজের মা ভিকি রবেয়না জানান, প্রতি বছর নভেম্বরে তার বাগানে ফোটে এক বিশেষ গোলাপ। এই গোলাপ লিজের প্রতি তাদের ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতীক, যা কেট ও উইলিয়ামের দেওয়া উপহার। বিরল পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত লিজের কিছু ছবি তোলার স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন উইলিয়াম ও কেট।
ক্যান্সারের সঙ্গে লিজের লড়াইয়ের দিনগুলোতে, রাজপরিবারের সদস্যরা ছিলেন সবসময় পাশে। উইন্ডসর ক্যাসেলে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে ছবি তোলার সুযোগ পান লিজ। সেখানে কেট ও উইলিয়াম, লিজ ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। লিজের ছোট ভাই মাতেও-এর সঙ্গেও তারা কথা বলেন।
ভিকি জানান, লিজ সবসময় বলতেন, তিনি যাদের সঙ্গে মিশেছেন, তাদের মধ্যে উইলিয়াম ও কেট ছিলেন সবচেয়ে আন্তরিক ও সহজ মানুষ। তারা শিশুদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশে যেতেন। লিজের মতে, এই ঘটনার সবচেয়ে ভালো দিক ছিল মাতেও-এর সঙ্গে তাদের ব্যবহার। প্রথমে সে খুব লাজুক ছিল, কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলার পরে সে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
লিজের চিকিৎসার সময় কেট নিজেও ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন। কঠিন সময়েও লিজকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন তিনি। লিজের পরিবার সবসময় রাজ দম্পতির সমর্থন ও ভালোবাসায় আপ্লুত ছিল।
লিজের চিকিৎসার জন্য ‘ক্যাপচার’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা তৈরি করেন তার বাবা-মা। এই সংস্থা এরই মধ্যে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার বেশি সংগ্রহ করেছে। লিজের মা জানান, প্রিন্সেসের সমর্থন না থাকলে তারা এত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতেন না। লিজের গল্প সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জন্যই।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ক্রিসমাস ক্যারল অনুষ্ঠানে এবং মে মাসে বাকিংহাম প্যালেসে এক গার্ডেন পার্টিতে লিজের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তারা রাজ দম্পতিকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
লিজের মা আরও জানান, লিজের ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা ছিল সবসময়। তিনি চেয়েছিলেন, সবাই জানুক, কীভাবে কেট তার প্রতি সদয় ছিলেন। এমনকি অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
লিজের মা বলেন, তার মেয়ে চেয়েছিল, সবাই জানুক, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। একইসঙ্গে তিনি জানাতে চেয়েছিলেন, প্রিন্সেস তার প্রতি কতটা ভালো ছিলেন। লিজের মতে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিন্সেস কেটকে নিয়ে কিছু মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন, যা খুবই দুঃখজনক ছিল।
লিজের মা আরও বলেন, “লিজ যখন প্রথম জানতে পারে যে তার ক্যান্সার হয়েছে, তখন সে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সে ভীত ছিল, মৃত্যু যন্ত্রণাদায়ক হবে এবং হাসপাতালে দীর্ঘ সময় কাটাতে হবে। তবে আমরা অন্য তরুণদের দেখাতে চেয়েছি, কিভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায়। লিজ মৃত্যুর পাঁচ দিন আগেও ছবি তুলেছিল।”
২০২৪ সালের ২৭শে নভেম্বর লিজ মারা যাওয়ার পর, কেট ও উইলিয়াম তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন। তারা লেখেন, “লিজের মা-বাবা ভিকি ও অ্যারন এবং ভাই মাতেও-এর প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা।” তারা তাদের বার্তায় ‘ডব্লিউ অ্যান্ড সি’ (W & C) স্বাক্ষর করেন, যা তাদের ব্যক্তিগত শোকবার্তা হিসেবে প্রকাশ পায়।
তথ্য সূত্র: পিপলস