বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা: মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-সংকট এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ক্রমেই যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অঞ্চলের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো কারণে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এর ফলস্বরূপ, তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহনের পথ হিসেবে পরিচিত। এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা বলছে, অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা দেখা দিলে তেলের দামে সাময়িক বৃদ্ধি হয়েছে।
তবে, ১৯৭০-এর দশকে ইরানি বিপ্লবের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তেমনটা এবার নাও হতে পারে। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তেলের ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাদের মতে, যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে, যা ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বলতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অতএব, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া।
বিশ্ব অর্থনীতির এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য সতর্ক থাকা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন