ডাক্তারদের ভুলে ছেলের ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত! ৪ মাস পর এলো ভয়াবহ পরিণতি

শিরোনাম: মায়েদের সাহস: সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ছেলের স্বপ্নপূরণের গল্প

ছোট্ট বো-এর জন্মের কয়েক সপ্তাহ আগে, লেক্সি কুক-এর জীবনে নেমে এসেছিল এক কঠিন দুর্যোগ। ক্রিসমাসের ছুটি কাটিয়ে ফেরার পরেই তিনি বুঝতে পারেন, তার শরীর ভালো নেই।

২৯ সপ্তাহের এক অপরিণত শিশু, বো-কে নিয়ে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু নিয়তির অন্য খেলা ছিল।

জন্মের পরেই বো-এর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ধরা পড়ে।

উটা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা লেক্সি, যিনি নিজেও আগে একজন স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, জানিয়েছেন, “ডাক্তাররা প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেননি। তারা বলেছিলেন, এটা স্বাভাবিক।

কিন্তু আমার মন মানছিল না।”

বো-এর বয়স যখন চার মাস, তখন তার সেরিব্রাল পালসি ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

তাদের স্বাভাবিক জীবন কাটানো কঠিন। কিন্তু লেক্সি হাল ছাড়েননি। বো-কে সুস্থ করে তুলতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর।

তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

শুরুর দিকে পরিস্থিতি ছিল খুবই কঠিন। চিকিৎসকেরা যখন বো-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশাজনক কথা বলতেন, তখন লেক্সির মনে হতাশা আসত।

তিনি ভেঙে পড়তেন, কিন্তু ছেলেকে ভালো করার স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।

একদিন, এক ডাক্তারের কথা শুনে লেক্সির মনে আশা জাগে। ডাক্তার বলেছিলেন, “মস্তিষ্কের নতুন পথ তৈরি হতে পারে।”

সেই কথাটিই যেন লেক্সির কাছে ছিল নতুন আলো। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, বো-কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই হবে।

বো-এর বয়স যখন দেড় বছর, তখন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। লেক্সি খাবার খাওয়াতে গিয়ে দেখেন, চামচ যেদিকে যাচ্ছে, বো- সেই দিকে তাকাচ্ছে।

লেক্সির চোখে জল এসে যায়। এরপর ধীরে ধীরে বো-এর উন্নতি হতে থাকে। অবশেষে, সাড়ে তিন বছর বয়সে সে প্রথমবার হাঁটতে শুরু করে।

সেই মুহূর্তটি ছিল লেক্সির জন্য এক বিশাল আনন্দের দিন।

লেক্সি তার ছেলের এই পথচলার গল্প টিকটকে শেয়ার করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়ে যায়।

অনেক মা-বাবা, যাদের সন্তান সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত, তারা লেক্সির কাছে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।

তাদের অনেকেই জানান, এই ভিডিও দেখে তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।

বো এখন সাত বছরের এক প্রাণবন্ত শিশু। সে নিয়মিত স্কুলে যায় এবং সেখানে তার জন্য একজন সহায়ক শিক্ষক রয়েছেন।

লেক্সি বলেন, “বো-কে নিয়ে আমি গর্বিত। সে অন্যদের থেকে আলাদা হতে পারে, কিন্তু তার ভেতরের শক্তি আমাকে মুগ্ধ করে।”

বো-এর চিকিৎসার জন্য তারা নিয়মিত বিভিন্ন হাসপাতালে যান। সেখানকার ডাক্তার ও কর্মীদের প্রতি লেক্সি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “এই মানুষগুলো আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তাদের সাহায্য ছাড়া আমরা এতদূর আসতে পারতাম না।”

প্রতি বছর মার্চ মাসে, সেরিব্রাল পালসি সচেতনতা মাস উপলক্ষে লেক্সি তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

তারা সবাই মিলে একটি র‍্যালি করেন এবং বো-এর সাফল্যের উদযাপন করেন।

লেক্সি মনে করেন, বো-কে নিয়ে তার এই পথচলা, কোনো বিনিময় দিয়ে পূরণ করা যাবে না।

তিনি বলেন, “আমি বো-কে পাল্টাতে চাই না। সেরিব্রাল পালসি নিয়েও সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান।”

লেক্সির এই গল্প, মায়েদের সাহস আর ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, কিভাবে একজন মা তার সন্তানের জন্য লড়াই করতে পারে, তা এই গল্পে ফুটে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *