যুদ্ধ চায়না চীন! ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে উত্তেজনা!

চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা ইসরায়েল-ইরান সংকটের আবহে নতুন মোড় নিয়েছে। উভয় দেশই এই অঞ্চলের উত্তেজনা কমাতে চাইছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি সতর্ক বার্তা দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার এক ফোনালাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়ে তাদের অভিন্ন অবস্থান তুলে ধরেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, তখন চীন ও রাশিয়া এই সংকটকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা বিশ্ব দরবারে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে কথা বলছে, যা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশল।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন ও শি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন। তাদের মতে, এটি জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তবে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও চীন তা নিয়ে কোনো নিন্দা জানায়নি।

চীনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি। শি জিনপিং উভয় পক্ষকে, বিশেষ করে ইসরায়েলকে, দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়।

তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, “এই সংঘাতের সঙ্গে জড়িত প্রধান শক্তিগুলো”-কে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করতে হবে, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি ইঙ্গিত।

চীনের বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অঞ্চলে অস্থিরতার মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। তারা বলছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ছিল অস্থিতিশীল এবং অপ্রত্যাশিত। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মিত্রদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত আবারও মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি “দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে” জড়িয়ে পড়তে পারেন। যদিও তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন, ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ এখনো চলছে।

চীন ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। ইরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অধীনে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য তৈরি করে।

চীন এই অঞ্চলে তাদের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে।

২০২৩ সালে, চীন সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

চীন দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে সমর্থন করে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে ইরানের কাছ থেকে নিয়মিত তেল আমদানি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সমর্থন দেওয়া।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন ও ইরানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে, যা নৌ মহড়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ইরানকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) এবং ব্রিকস-এর মতো আন্তর্জাতিক জোটে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রেও চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ইরান চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর (বিআরআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের এই বৃহৎ অবকাঠামো ও বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য ইরান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, ইরানের অবস্থান চীনের জন্য ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার সহজ করে এবং পারস্য উপসাগর থেকে তেল আমদানির পথ সুগম করে।

রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এই অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে।

শি জিনপিং উত্তেজনা কমাতে চারটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, যার মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু সমাধান এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইরান, ইসরায়েল, মিশর ও ওমানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তবে, এই সংঘাত নিরসনে চীনের বাস্তবিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অতীতে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সময় চীন শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিরসনে চীনের অভিজ্ঞতা কম এবং এই অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা প্রভাবও সীমিত।

অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধে, যেখানে চীনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে, সেখানেও তারা রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে। যদিও চীন নিজেকে নিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

বর্তমানে, যখন বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন ইরান-সংক্রান্ত বিষয়ে সংযত থাকার মাধ্যমে চীন একটি প্রতীকী জয়লাভ করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *