আপনার ওষুধের আলমারিতে লুকিয়ে মৃত্যুফাঁদ! এফডিএ’র ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত

শিরোনাম: ঔষধের সুরক্ষা: মার্কিন FDA-এর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, ঝুঁকিতে বিশ্বজুড়ে জেনেরিক ওষুধের বাজার?

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA), ওষুধ শিল্পের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সম্প্রতি তাদের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মূলত, উৎপাদন মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়া কিছু ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত ঔষধ, যা আমদানি নিষিদ্ধ ছিল, সেগুলোর আমদানি অব্যাহত রাখার অনুমতি দিয়েছে FDA।

এই সিদ্ধান্তের ফলে রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, সেই সাথে বিশ্বজুড়ে জেনেরিক ওষুধের বাজার নিয়েও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। মূলত, ওষুধ সংকটের কারণে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২২ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পরিদর্শক ভারতের একটি বিশাল ওষুধ কারখানায় যান। সেখানে তারা উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষাগারগুলো খুঁটিয়ে দেখেন। পরিদর্শনের সময় তারা উৎপাদন সরঞ্জামগুলিতে ধাতব কণা এবং ঔষধের নমুনায় দূষণের প্রমাণ পান।

অনেক ক্ষেত্রে, ঔষধের গুণগত মান পরীক্ষার প্রক্রিয়াও ৬ মাসের বেশি সময় ধরে স্থগিত ছিল। এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের কারণে, FDA সাধারণত ঐ কারখানা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কিন্তু ঔষধের সরবরাহ অব্যাহত রাখার যুক্তিতে, FDA-এর অভ্যন্তরের একটি গোপন দল নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কারখানাগুলি থেকে ঔষধ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমতি দেয়। ক্যান্সার ও মৃগীরোগের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ঔষধও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

FDA সাধারণত ঔষধগুলির গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করে না এবং রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিযোগগুলিও সেভাবে খতিয়ে দেখে না। এর ফলে, ঔষধগুলি রোগীদের কোনো ক্ষতি করছে কিনা, তা জানার কোনো উপায় থাকে না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করে এই ছাড় দেওয়ার বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে রোগীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। FDA-এর কাছে জমা হওয়া অভিযোগগুলোতে ঔষধ সেবনের পর রোগীদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারো শ্বাসকষ্ট হয়েছে, কারো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে, আবার কারো হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।

কিছু ক্ষেত্রে, ঔষধের স্বাদ বা গন্ধেও পরিবর্তন দেখা গেছে। এমনকি, ঔষধ সেবনের কারণে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই ধরনের অভিযোগগুলো FDA-কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, FDA-এর এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এর ফলে নিম্নমানের ঔষধ রোগীদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও FDA দাবি করে যে তারা ঔষধগুলির সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, যেসব কারখানার বিরুদ্ধে উৎপাদনের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ওপর এই ধরনের নির্ভরতা কোনো সমাধান নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এর মতো উন্নত দেশগুলো, ভারত ও চীন থেকে আসা ঔষধের গুণগত মান পরীক্ষা করে থাকে। কিন্তু FDA সেই পথে হাঁটেনি।

এই ঘটনার সূত্র ধরে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঔষধের গুণগত মান এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে জেনেরিক ঔষধের ব্যবহার ব্যাপক, সেখানে ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA)-কে এক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে হবে, যাতে রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। একই সাথে, ঔষধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং গুণগত মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের FDA-এর এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে ঔষধ শিল্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা। রোগীদের সুরক্ষার বিষয়টি কোনো আপোষের জায়গা নয়। প্রতিটি দেশের সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং ঔষধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *