মরক্কো ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন শহরে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইছে, কারণ ফিফা বিশ্বকাপের মতো একটি বড় আয়োজনের আগে এমন ঘটনা বিশ্বজুড়ে পশুপ্রেমীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোকে “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন” করার উদ্দেশ্যে এই কুকুর নিধন অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতের বেলা বন্দুকধারীরা রাস্তায় নেমে নির্বিচারে কুকুর মারছে। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে কুকুরদের ধরে নিয়ে গিয়ে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দেশটির ইফране শহরে এমন ঘটনা বেশি ঘটছে, যেখানে বিশ্বকাপের একটি ভেন্যু তৈরির প্রস্তাব রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তারা রাস্তার কুকুর সরিয়ে নিচ্ছে এবং তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস্তবে ঘটছে ভিন্ন ঘটনা। তারা বলছেন, রাস্তায় কুকুর মারার ঘটনা এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি, সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে পশু অধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের দাবি, ফিফা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করা উচিত। তারা ফিফার কাছে আবেদন জানিয়েছে, যাতে বিশ্বকাপের আগে এমন নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা হয়। জানা গেছে, কিছু সংগঠন ফিফার কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে, মরক্কোর সরকার বলছে, তারা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে কাজ করছে। তাদের মতে, বেওয়ারিশ কুকুর জলাতঙ্কের মতো রোগের জীবাণু বহন করে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে, সরকার জানিয়েছে, তারা কুকুর নিধনের পরিবর্তে “ট্র্যাপ-নিউটার-ভ্যাকসিনেট-রিলিজ” (TNVR) প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে কুকুরদের ধরে তাদের প্রজনন ক্ষমতা রোধ করে, টিকা দিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া হবে।
ফিফা জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে। ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে বিশ্বকাপের আয়োজনে পশুর অধিকার সুরক্ষিত হবে।
বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টের আগে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। পশুপ্রেমী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো চাইছে, ফিফা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করে। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন