মারথা’স ভিনইয়ার্ড দ্বীপটি “জস” (Jaws) নামক বিখ্যাত সিনেমাটির কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত এই সিনেমাটি দ্বীপটিকে দিয়েছে এক ভিন্ন পরিচয়।
তবে, এই সিনেমার জনপ্রিয়তা একদিকে যেমন দ্বীপটির পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনই এর দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, অ্যাকুইনাহ ওয়াম্পানোয়াগ আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি করেছে অস্তিত্বের সংকট।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, অ্যাকুইনাহ ওয়াম্পানোয়াগ-রা এই দ্বীপে প্রায় ১০,০০০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু “জস”-এর সাফল্যের পর পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার জীবনযাত্রায় আসে বড় পরিবর্তন।
জমির দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক পরিবার তাদের নিজস্ব জমিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পর্যটন শিল্প তাদের জীবিকার প্রধান উপায় হলেও, এটি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছে।
সিনেমার কারণে মারথা’স ভিনইয়ার্ড-এর পরিচিতি বাড়লেও, সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা আগের মতো নেই। তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বাইরের মানুষের কাছে তারা হয়তো “জস” সিনেমার মতোই একটি “আকর্ষণ”-এর বিষয়, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব এবং অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে অনেক বাধা পেরোতে হয়।
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, অ্যাকুইনাহ ওয়াম্পানোয়াগ সম্প্রদায়ের এক সদস্য জানান, “আমাদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য লড়তে হচ্ছে। আমাদের আদিবাসী পরিচয়কে অস্বীকার করা হয়, আমাদের ভূমির উপর বিশেষ অধিকার নেই বলে মনে করা হয়।
পশ্চিমা বিশ্বে আদিবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে মানুষের ধারণা সীমিত, যা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
মারথা’স ভিনইয়ার্ড-এর গল্প শুধু একটি সিনেমার গল্প নয়, বরং এটি একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার সংগ্রাম। এই দ্বীপের আসল সৌন্দর্য “জস” নয়, বরং হাজার বছর ধরে এখানে বসবাস করা ওয়াম্পানোয়াগদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং তাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ।
বিশ্বজুড়ে, আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো প্রায়ই তাদের সংস্কৃতি, ভূমি এবং অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে। বাংলাদেশেও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। মারথা’স ভিনইয়ার্ডের ঘটনা, এই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে, একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ, যা আমাদের সকলকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে এবং তাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করে।
তথ্যসূত্র: People