নতুন যুগে পরিবেশ-বান্ধব, কারখানায় তৈরি বাড়ির ধারণা: বাংলাদেশের জন্য কতটা উপযোগী?
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বাসস্থান সংকট একটি পরিচিত সমস্যা। একইসাথে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে, যা টেকসই ও নির্ভরযোগ্য আবাসনের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘প্রি-ফ্যাব’ বা কারখানায় তৈরি বাড়ি নির্মাণের ধারণাটি বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
প্রি-ফ্যাব বাড়ি আসলে কী? এটি হলো এমন এক ধরনের বাড়ি, যা সম্পূর্ণভাবে অথবা আংশিকভাবে কারখানায় তৈরি করা হয়। এরপর, বাড়ির অংশগুলো একত্রিত করে দ্রুত সময়ে মূল কাঠামো তৈরি করা যায়।
এই পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচে, সেই সাথে নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মানও থাকে অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে, যেমন মেইন, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ম্যাসাচুসেটস এবং ভার্মন্টের মত স্থানে ইতোমধ্যে প্রি-ফ্যাব বাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সেখানকার মানুষজন এখন পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই আবাসনের দিকে ঝুঁকছেন।
প্রচলিত বাড়ির তুলনায় কারখানায় তৈরি বাড়িগুলো নির্মাণে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি শক্তি সাশ্রয়ী হয়। ফলে বিদ্যুতের বিল যেমন কমে, তেমনি পরিবেশের উপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ইউনিটি হোমস (Unity Homes), ব্রাইটবিল্ট হোম (BrightBuilt Home) এবং জিও লজিক (GO Logic)-এর মতো কোম্পানিগুলো এই ধরনের বাড়ি তৈরি করছে। তারা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন কাস্টমাইজ করার সুযোগ দেয়।
বাড়ির দেয়াল, জানালা এবং দরজা কারখানায় তৈরি হওয়ায় নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত হয়। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা বাড়িও তৈরি করা সম্ভব।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতির তুলনায় সময় অনেক কম লাগে। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে একটি সাধারণ বাড়ি তৈরি করতে কয়েক মাস লেগে যায়, সেখানে প্রি-ফ্যাব বাড়ি কয়েক দিনের মধ্যেই তৈরি করা সম্ভব।
এছাড়া, কারখানায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্মাণের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করা যায় এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব থেকে এটি মুক্ত থাকে।
খরচের দিক থেকে দেখতে গেলে, প্রি-ফ্যাব বাড়ির প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এর সুবিধা অনেক।
শক্তি সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে বিদ্যুতের বিল কমে আসে, যা জীবনযাত্রার খরচ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, প্রি-ফ্যাব বাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করে।
তবে, বাংলাদেশে এই ধরনের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখানকার নির্মাণ শ্রমিকদের এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত করতে সময় লাগতে পারে।
এছাড়া, প্রি-ফ্যাব বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী এবং প্রযুক্তি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতে পারে, যা সামগ্রিক খরচকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভবিষ্যতে, প্রি-ফ্যাব বাড়ি নির্মাণ বাংলাদেশের আবাসন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। সরকার যদি এই ধরনের নির্মাণকে উৎসাহিত করে এবং সহজ শর্তে ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, তবে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারে।
পরিবেশ-বান্ধব, টেকসই এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রি-ফ্যাব বাড়ি একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন