ভূমিকম্প থেকে ক্যান্সার: ফাটল ধরানো নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ভূগর্ভস্থ শিলা থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের এক বিতর্কিত পদ্ধতি হলো ফ্র্যাকিং। এই প্রক্রিয়ার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে।

বিশেষ করে, উন্নত বিশ্বে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও, এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।

ফ্র্যাকিং আসলে কী?

হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচারিং বা ফ্র্যাকিং হলো একটি কৌশল, যার মাধ্যমে শিলাস্তরের গভীরে থাকা জীবাশ্ম জ্বালানি – মূলত মিথেন গ্যাস – উত্তোলন করা হয়। এই পদ্ধতিতে, প্রায় এক মাইল গভীর পর্যন্ত একটি ছিদ্র খুঁড়ে, সেখানে জল, বালি এবং রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ উচ্চ চাপে প্রবেশ করানো হয়।

এর ফলে শিলার মধ্যে ফাটল তৈরি হয় এবং গ্যাস ও তেল উপরে উঠে আসে।

ফ্র্যাকিং-এর উত্থান ও প্রভাব

ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ১৯৪০-এর দশকে উদ্ভাবিত হয় এবং ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়ে। এই পদ্ধতির কারণে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফ্র্যাকিং-এর সমর্থকরা একে কয়লার চেয়ে “পরিচ্ছন্ন” জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ গ্যাস পোড়ালে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।

তারা মনে করেন, এটি অর্থনীতির উন্নতিতে সাহায্য করে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

তবে, ফ্র্যাকিং-এর কিছু গুরুতর সমস্যাও রয়েছে। এর প্রধান একটি হলো মিথেন গ্যাস নিঃসরণ।

মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর।

ফ্র্যাকিং প্রক্রিয়া পরিবেশে এই গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও, ফ্র্যাকিং-এর কারণে বায়ু ও জল দূষণের ঝুঁকি বাড়ে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলি ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে জল দূষিত করতে পারে।

ফ্র্যাকিং-এর ফলে সৃষ্ট দূষণ স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

ফুসফুসের রোগ, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং স্নায়বিক সমস্যাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, ফ্র্যাকিং-এর কারণে ভূমিকম্পের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

ফ্র্যাকিং এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ

ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি পরিবেশের উপর নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে একদিকে যেমন কার্বন নিঃসরণ বাড়ে, তেমনি অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও দূষিত হয়।

ফ্র্যাকিং-এর বর্জ্য পদার্থ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না হলে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ফ্র্যাকিং নিয়ে পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ফ্র্যাকিং একদিকে যেমন জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে, তেমনি পরিবেশের উপর এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বিবেচনা করা জরুরি।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই জ্বালানি উৎসের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা

বাংলাদেশে ফ্র্যাকিং-এর সরাসরি ব্যবহার না হলেও, এই প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দিকগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিশেষ করে, ভবিষ্যতের জ্বালানি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফ্র্যাকিং-এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

উপসংহার

ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি একদিকে যেমন জ্বালানি উৎপাদনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তেমনি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য কিছু ঝুঁকিও তৈরি করেছে।

তাই, এই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি সমন্বিত ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *