ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: সাহায্যপ্রাপ্ত আত্মহত্যার পথে?

যুক্তরাজ্যে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুবরণের একটি বিল অনুমোদন করা হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই আইনটি পাস হয়, যেখানে পক্ষে ভোট পড়ে ৩১৪টি এবং বিপক্ষে ছিল ২৯১টি।

এই বিল এখন উচ্চকক্ষে চূড়ান্ত পর্যালোচনার জন্য যাবে। খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সারা দেশে এই বিষয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।

বিলটি আইনে পরিণত হলে, যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে ওঠার সম্ভাবনা নেই, এমন গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের, ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে জীবন শেষ করার সুযোগ তৈরি হবে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, রোগীকে এমন একটি ওষুধ সেবনের অনুমতি দেওয়া হবে, যা তাদের জীবনাবসান ঘটাবে। তবে এই সিদ্ধান্তের আগে দুইজন চিকিৎসক এবং একটি প্যানেলের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

এই বিলের পক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের যুক্তি হলো, এর মাধ্যমে রোগীরা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন এবং তাদের সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

বিবিসির একজন উপস্থাপক, যিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছেন, তিনি এই বিলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। বিলের প্রবক্তারা বলছেন, এটি রোগীদের “কীভাবে তারা মারা যাবে” সেই বিষয়ে একটি পছন্দ দেবে।

অন্যদিকে, এই বিলের বিরোধীরা ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে জীবন নিয়ে ভুল বার্তা যেতে পারে এবং দুর্বল মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, জীবন-মৃত্যু সংক্রান্ত এই অধিকারের চেয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।

যুক্তরাজ্যের এই বিলটি কানাডা, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে প্রচলিত আইনের কাছাকাছি। তবে সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডার কিছু অংশে শুধুমাত্র জীবন-সংশয়ী রোগীদের জন্য নয়, বরং কঠিন যন্ত্রণাক্লিষ্ট রোগীদেরও এই ধরনের সাহায্য করার অনুমতি রয়েছে।

বর্তমানে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কাউকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা একটি অপরাধ, যার জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছানুসারে অন্য কারও জীবন শেষ করাকে খুন বা নরহত্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।

এই বিলটি নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। বিশেষ করে, জীবনের চূড়ান্ত মুহূর্তে একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এবং সমাজের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে।

এই বিতর্কের মাঝে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা ভবিষ্যতে মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর ধারণাকে প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *