রহস্যে মোড়া মহাবিশ্ব! নতুন টেলিস্কোপ কী চমক দেখাবে?

আকাশের গভীরে লুকানো রহস্য উন্মোচনে প্রস্তুত নতুন এক দূরবীক্ষণ যন্ত্র। চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমিতে স্থাপিত ভেরা রুবিন মানমন্দির (Vera Rubin Observatory) আগামী দশ বছর ধরে রাতের আকাশের ছবি তুলবে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে।

এই মানমন্দির তৈরি হয়েছে প্রয়াত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা রুবিনের নামে, যিনি ‘ডার্ক ম্যাটার’-এর (Dark Matter) অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে বের করেছিলেন।

এই মানমন্দিরের বিশাল আকারের ক্যামেরাটি তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। এটি একসঙ্গে বিশাল এলাকার ছবি তুলতে সক্ষম এবং এর ক্ষমতা প্রায় ৩,২০০ মেগাপিক্সেলের।

ক্যামেরাটি এতটাই শক্তিশালী যে এটি রাতের আকাশের খুব হালকা আলোও ধারণ করতে পারবে। এর মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির (Milky Way Galaxy) প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি নক্ষত্রের ছবি তোলা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে কয়েক মিলিয়ন সুপারনোভা (supernova) এবং প্রায় ২ হাজার কোটি গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এই মানমন্দিরের মাধ্যমে মহাকাশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রহস্য উন্মোচন করতে চান। তাদের প্রধান আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর (Planet Nine) সন্ধান।

এই গ্রহটি নেপচুনের (Neptune) মতো বিশাল আকারের হতে পারে এবং সৌরজগতের বাইরের অন্ধকারে এটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়া, এটি আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু (interstellar objects) খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

এই বস্তুগুলো অন্য নক্ষত্র জগৎ থেকে এসে আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করে। ২০১৬ সালে ‘ওওমুয়ামুয়া’ (Oumuamua) নামের একটি এবং ২০১৯ সালে ‘বরিসভ’ (Borisov) নামের আরেকটি আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

ভেরা রুবিন মানমন্দির এই ধরনের আরও অনেক বস্তু খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গঠন সম্পর্কেও নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সির ভেতরের নক্ষত্রগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তাদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এর মাধ্যমে গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তনের বিষয়ে আরও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়াও, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি (Dark Energy) সম্পর্কেও নতুন তথ্য আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে।

মহাবিশ্বের মোট ভরের প্রায় ৯৫ শতাংশই হলো ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি। এদের উপস্থিতি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, তবে এদের স্বরূপ এখনো অজানা।

ভেরা রুবিন মানমন্দির এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

মানমন্দিরটির নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার সমান।

এর মাধ্যমে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ ডেটা (Data) বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করতে পারবেন।

এই মানমন্দির শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিশাল পরীক্ষাগার, যেখানে তারা মহাকাশের অজানা রহস্য উন্মোচনের জন্য প্রস্তুত।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *