মার্কিন এয়ারলাইন্সের গোপন ফন্দি! আপনার ডেটা কিনে নিল সরকার?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমান সংস্থাগুলি এখন তাদের যাত্রী তথ্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাথে ভাগ করে নিচ্ছে। এই ঘটনার জেরে উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে বিমানযাত্রীরা।

সম্প্রতি, জানা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটটি প্রধান বিমান সংস্থা তাদের যাত্রী সম্পর্কিত তথ্য দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কাছে বিক্রি করছে। এই পদক্ষেপটি ভ্রমণকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

আর্টিকেল রিপোর্টিং কর্পোরেশন (এআরসি), যা ডেল্টা এয়ারলাইন্স, সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, আলাস্কা এয়ারলাইন্স, এয়ার কানাডা, লুফথানসা এবং এয়ার ফ্রান্সের মালিকানাধীন, তাদের বিশাল ডেটা ভাণ্ডার এখন ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)-এর হাতে তুলে দিয়েছে।

এই সিবিপি আবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগেরই একটি অংশ। এই ডেটাবেসে যাত্রী নাম, আর্থিক বিবরণ এবং ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

জানা গেছে, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর কাছে এই তথ্য সরবরাহের জন্য এআরসি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ২০২৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে।

চুক্তি অনুসারে, আইসিই এখন ট্রাভেল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম (টিআইপি) ডাটাবেসে প্রবেশাধিকার পাবে। এই ডাটাবেস মূলত তৈরি করা হয়েছিল ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির ফলে অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

কারণ, এই ডেটা ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষ যে কোনও ‘টার্গেটেড’ ব্যক্তির সম্পূর্ণ ফ্লাইট তালিকা, আর্থিক বিবরণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজেই পেতে সক্ষম হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশেষ করে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করছেন, তাদের টিকিট কেনার সময় সতর্ক থাকা উচিত।

তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে, বিদেশি নাগরিক এবং শরণার্থী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের উচিত তাদের ক্লায়েন্টদের টিকিট নিজেরাই কাটা। অন্যথায়, তাদের তথ্যও কর্তৃপক্ষের হাতে চলে যেতে পারে।

এই ডেটা সংগ্রহের পাশাপাশি, বিমানবন্দরে মুখের স্বীকৃতি প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য ভ্রমণ ডেটা গোপনীয়তা সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলিও ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির নামে, যাত্রী ছবিসহ বিভিন্ন বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের ক্ষেত্রে, এই ছবিগুলো মুছে ফেলা হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

কারণ, কর্তৃপক্ষের নথি অনুযায়ী, অ-মার্কিন নাগরিকদের সমস্ত বায়োমেট্রিক ডেটা ‘ইমিগ্রেশন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমের সমর্থনে ৭৫ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে বর্তমানে যে নীতিগুলি তৈরি হচ্ছে, তা ভ্রমণকারীদের অধিকারের পরিপন্থী। তাদের মতে, সরকার যদি সন্দেহজনক কিছু খুঁজে বের করার জন্য সবার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। প্রত্যেক ভ্রমণকারীরই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।

বিশেষ করে যারা নিয়মিত আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এই ধরনের ডেটা সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি জানা জরুরি।

তথ্যসূত্র: ইউএস গণমাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *