সাগরে একটানা সাঁতার, এরপর যা ঘটল! শুনে শিউরে উঠবেন…

রেকর্ড গড়ার নেশা নয়, বরং নিজের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করার অদম্য ইচ্ছাই যেন ছিল আসল। যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু রেবেকা ম্যান, যিনি দীর্ঘ ২১ ঘণ্টা ধরে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাঝখানে প্রায় ৪০ মাইল সাঁতার কেটে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

এই দুঃসাহসিক অভিযানের পর তিনি যে শারীরিক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন, তা শুনলে গা শিউরে ওঠে।

২০১৯ সালে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর, অনেকেই হয়তো খেলা থেকে অবসর নিতেন। কিন্তু রেবেকা বেছে নিয়েছিলেন অন্য পথ।

তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, মানুষ চাইলে অসম্ভবকেও জয় করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, তিনি বেছে নিলেন ‘মাউই নুই ট্রাই-চ্যানেল ক্রসিং’ সাঁতার প্রতিযোগিতা।

যেখানে মাউই, মোলোকাই এবং লানাই দ্বীপের মাঝে একটানা সাঁতার কাটার চ্যালেঞ্জ ছিল।

মাত্র ২১ বছর বয়সে, রেবেকা এই কঠিন চ্যালেঞ্জে নামেন। এর আগে তিনি একটানা ২৫ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছিলেন।

কিন্তু এইবার সমুদ্র ছিল আরও উত্তাল, আর পথ ছিল আরও দীর্ঘ।

সাঁতারের সময় তিনি মানসিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। শারীরিক কষ্টের থেকেও যেন মনের যুদ্ধটাই ছিল বেশি।

তিনি জানিয়েছেন, “সমুদ্রে আমি কোথায় আছি, কতক্ষণ সাঁতরাবো, কিছুই জানতাম না। শুধু নিজেকে বলতাম, ‘তুমি পারবে’।”

প্রায় ২১ ঘণ্টা একটানা সাঁতার কাটার পর, তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ করেন।

তবে, এই সাফল্যের পেছনে ছিল কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস। তিনি জানান, সাঁতারের সময় প্রতি ২০ মিনিট অন্তর তরল খাবার গ্রহণ করতেন।

কিন্তু সাঁতার শেষে যখন তীরে ফিরলেন, তখন আসল পরীক্ষা শুরু হলো।

নোনা জলের কারণে তার শরীরে মারাত্মক ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এমনকি তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।

তার মনে হচ্ছিল যেন গলা বন্ধ হয়ে আসছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল, সাঁতার কাটার ৬ মাস পরও তিনি একই দুঃস্বপ্ন দেখতেন।

যেখানে তিনি গভীর সমুদ্রে সাঁতার কাটছেন, আর তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশাল সব হাঙর!

এই দুঃসাহসিক সাঁতারের অভিজ্ঞতা শুধু শারীরিক কষ্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

রেবেকা জানান, তিনি ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ (ওসিডি)-এ আক্রান্ত ছিলেন।

দীর্ঘক্ষণ একা থাকার কারণে তার মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হতো। কিন্তু তিনি নিজেকে শান্ত রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন।

এই ঘটনার কয়েক বছর পর, তিনি দুটি বই প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে একটি কিশোর উপন্যাসও রয়েছে।

বর্তমানে তিনি সাঁতারে আবারও ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রেবেকা ম্যানের এই গল্প শুধু একটি সাঁতারের কাহিনি নয়, এটি মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

তিনি প্রমাণ করেছেন, জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

তথ্য সূত্র: People

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *