ভ্রমণে সুস্থ থাকতে চান? জরুরি অবস্থার জন্য ব্যাগে কি কি নেওয়া দরকার, জানাচ্ছেন একজন অভিজ্ঞ নার্স।
ভ্রমণে বের হলে অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো আমাদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে। অচেনা পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, ভ্রমণের আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
একজন অভিজ্ঞ নার্স আমাদের জানাচ্ছেন, ভ্রমণের সময় ব্যাগে কি কি প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা উচিত।
কাজের সূত্রে ভ্রমণ করেন এমন একজন নার্স, কারেন ফিশার (RN, BSN, CCRN)। তিনি জানাচ্ছেন, ভ্রমণের সময় কিছু জরুরি স্বাস্থ্য সামগ্রী হাতের কাছে থাকলে অনেক সুবিধা হয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, যেকোনো ভ্রমণের জন্য ব্যাগে কি কি রাখা দরকার।
সব ধরণের ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস:
* **ব্যান্ডেজ (Bandage):** ভ্রমণের সময় কেটে গেলে বা ফোস্কা পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ব্যান্ডেজ খুব প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন আকারের ব্যান্ডেজ রাখা ভালো।
কাপড়ের তৈরি ব্যান্ডেজ ত্বকের সাথে ভালোভাবে লেগে থাকে।
* **অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম (Antibacterial Ointment):** কাটা বা ফোস্কার সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম যেমন – নিওস্পোরিন (Neosporin) অথবা ব্যাকট্রাসিন (Bacitracin) সাথে রাখা উচিত। ক্ষত স্থানে খুব বেশি পরিমাণে মলম ব্যবহার না করাই ভালো।
* **ব্যথানাশক ঔষধ (Pain Relief Medication):** ভ্রমণের সময় মাথাব্যথা, পেশিতে টান ধরা বা অন্য কোনো শারীরিক কষ্টের জন্য প্যারাসিটামল (Paracetamol) অথবা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) জাতীয় ব্যথানাশক ঔষধ সাথে রাখা দরকার।
বাংলাদেশে প্যারাসিটামলের সাধারণ ব্র্যান্ড হলো – “নাপা” এবং আইবুপ্রোফেনের পরিচিত ঔষধ “রেনাটা”।
* **বদহজমের ঔষধ (Stomach Aid):** নতুন খাবার খাওয়ার কারণে অনেক সময় বদহজম হতে পারে। তাই, পেপটো-বিসমল (Pepto Bismol) অথবা অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষধ সাথে রাখা ভালো।
বুক জ্বালা করলে “গ্যাস্ট্রোসিড” অথবা “টিums”-এর মতো ঔষধ সাথে রাখতে পারেন।
* **ভিক্স ভেপোরাব (Vicks Vaporub):** ঠান্ডা লাগলে বা হালকা জ্বর হলে এটি আরাম দেয়। এটি কাশি কমাতে এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
* **অ্যালার্জির ঔষধ (Allergy Medication):** যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ, যেমন – “হিস্টাসিন” সাথে রাখা অপরিহার্য।
এটি অ্যালার্জির কারণে হওয়া চোখ, নাক ও ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
* *অতিরিক্ত ঔষধ* – ভ্রমণের সময় অবশ্যই আপনার প্রেসক্রিপশন সাথে রাখুন।
যারা ক্যাম্পিং বা ট্রেকিং-এর মতো ভ্রমণে যান, তাদের জন্য কিছু অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় জিনিস:
* **উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট (Brightly-colored jacket):** জঙ্গলে বা পাহাড়ি অঞ্চলে হারিয়ে গেলে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট সাথে রাখা জরুরি। সবুজ রঙের জ্যাকেট ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এটি প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারে।
* **মধু (Honey):** মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো আঘাত পেলে বা ক্ষত হলে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতেও এটি সাহায্য করে।
* **বাঁশি (Whistle):** বিপদকালে সাহায্যের জন্য বাঁশি খুব কাজে আসে। বিশেষ করে, বন্য পরিবেশে হারিয়ে গেলে অথবা কোনো বন্য প্রাণীর সম্মুখীন হলে বাঁশি বাজিয়ে অন্যদের সতর্ক করা যেতে পারে।
* **আইস প্যাক (Ice pack):** আঘাত পেলে বা মচকে গেলে ফোলা কমানোর জন্য তাৎক্ষণিক বরফের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে, ব্যবহারযোগ্য আইস প্যাক সাথে রাখা সুবিধাজনক।
* **ছোট হেডল্যাম্প (Headlamp):** রাতে পথ চলার জন্য টর্চলাইটের পরিবর্তে একটি হেডল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
* **গজ কাপড় (Rolled Gauze):** ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য গজ কাপড় প্রয়োজন। এটি বড় ক্ষত ঢাকতে এবং সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, ভ্রমণের সময় কিছু অতিরিক্ত জিনিস সাথে রাখা ভালো। যেমন – মেডিকেল গ্লাভস, সেফটি পিন, কটন বাড ও অ্যালকোহল প্যাড।
ভ্রমণে যাওয়ার আগে গন্তব্যের কাছাকাছি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ঠিকানা জেনে রাখা ভালো। এছাড়া, জরুরি অবস্থার জন্য ট্যাক্সি বা অন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা আছে কিনা, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করে রাখা দরকার।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার
