গাজায় খাবার যুদ্ধ: প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ছুটে চলা ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ!

গাজায় খাদ্য সংগ্রহের এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা: জীবন বাজি রেখে সাহায্যের আশায় ফিলিস্তিনিরা।

গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকটের চরম পরিস্থিতিতে সেখানকার ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন জীবন হাতে নিয়ে সাহায্যের আশায় ছুটছেন। ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিবর্ষণ, খাদ্য বোঝাই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা মানুষের উপর হামলা, এমনকি খাদ্য লুটেরাদের দৌরাত্ম্য—এসবের মধ্যেই দিন কাটছে তাদের।

খাবার সংগ্রহের এই কঠিন লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। খবর এপি’র।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যদিও সম্প্রতি কিছু খাদ্য সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

সাহায্য বিতরণের জন্য গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর মাধ্যমে ইসরায়েল চারটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এর বাইরে জাতিসংঘের কিছু ত্রাণ সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসা মানুষের উপর প্রায়ই গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে কয়েকশ’ মানুষ নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়িবহরগুলোতেও প্রায়ই বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। খাবার পাওয়ার আশায় আসা মানুষেরা প্রায়ই ট্রাকগুলো লুট করে নেয়।

আমি বুঝি না, পরিস্থিতি কীভাবে আরও খারাপ হতে পারে, কারণ এটা এখনই ভয়ঙ্কর। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে তা আরও খারাপ হচ্ছে।”

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র ওলগা চেরেকোভা

গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রে বা তার আশেপাশে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, সেনারা কেবল তাদের দিকে আসা সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিল।

খাবার সংগ্রহের জন্য হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন কয়েক মাইল পথ হেঁটে যেতে হয়। রাফাহ শহরের বাইরে জিএইচএফ-এর তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।

মোহাম্মদ সাকের নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, খাবার সংগ্রহের সময় সেনাদের গুলিবর্ষণের মধ্যে তিনি এবং আরও অনেকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, তাদের সামনেই একজন তরুণ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সাকেরের ভাষ্যমতে, এরপর যখন কেন্দ্র খোলা হয়, তখন খাদ্য সংগ্রহের জন্য এক উন্মত্ত দৌড় শুরু হয়। তিনি দেখেন, অনেকে আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। যারা আগে পৌঁছাতে পারছিল না, তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছিল খাবার।

একই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ওমর আল-হোবি। তিনি বলেন, “খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি কয়েকবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি। ক্ষুধার্ত মানুষের এই লড়াইয়ে কেউ কারও প্রতি দয়া দেখাচ্ছে না। সবাই নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত।”

খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষের চরম অসহায়তা ও নিষ্ঠুরতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। হেবা জওদা নামে এক নারী জানান, তিনি দেখেছেন কয়েকজন লোক একটি ছেলেকে মারধর করে তার খাবার কেড়ে নিচ্ছে। আরেকজন বৃদ্ধকে মারধর করে তার খাবার ছিনিয়ে নেওয়া হয়, কারণ তিনি তার সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন।

আল-হোবি জানান, তিনি নিজেও খাবার সংগ্রহের সময় পদদলিত হয়েছিলেন। কোনোমতে এক ব্যাগ চাল আর কিছু নুডলস জোগাড় করতে পারলেও, অনেক খাবার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

আল-হোবির স্ত্রী আনোয়ার সালেহ জানান, তারা সেই সামান্য খাবার দিয়েই এক সপ্তাহ চালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, তাকে আর সেখানে যেতে হবে না। তার জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *