মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত লুইজিয়ানার স্কুলগুলোতে বাইবেলের দশ আজ্ঞা প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া একটি আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। শুক্রবারের এই রায়ের ফলে দেশটির বিচার বিভাগ এবং শিক্ষা বিষয়ক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা ধর্ম এবং রাষ্ট্রের পৃথকীকরণের প্রশ্নে দীর্ঘকাল ধরে চলা বিতর্কেরই একটি অংশ।
ঐতিহাসিক এই মামলার সূত্রপাত হয় যখন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রি গত বছর একটি বিলে স্বাক্ষর করেন, যেখানে রাজ্যের সব সরকারি বিদ্যালয়ে দশ আজ্ঞা প্রদর্শনের কথা বলা হয়। এই আইনের বিরোধীরা বলছেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে।
এই সংশোধনীতে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সরকারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আদালতের এই রায়ের পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union) এর সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি হিদার এল. ওয়েভার জানান, এটি “ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ এবং সরকারি শিক্ষার জন্য একটি জোরালো বিজয়।” তিনি আরও বলেন, “আজকের রায়ের মাধ্যমে, ফিফথ সার্কিট (Fifth Circuit) একটি মূল সাংবিধানিক প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছে: সরকারি স্কুলগুলো কোনো ধর্মীয় বিদ্যালয় নয়, এবং তাদের অবশ্যই সকল শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাতে হবে, তাদের ধর্মীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেন।”
তবে, এই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল।
তিনি মনে করেন, এই রায়টি রাজ্যের সব স্কুলের জন্য প্রযোজ্য হবে না এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি, প্রয়োজন হলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গেলে ধর্ম এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে।
অতীতে, সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন সময়ে সরকারি স্থানে দশ আজ্ঞা প্রদর্শনের বৈধতা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রায় দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮০ সালে আদালত কেন্টাকির একটি আইনের বিরুদ্ধে রায় দেয়, যেখানে দশ আজ্ঞা প্রদর্শনের মাধ্যমে ধর্মীয় উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
আবার, ২০০৫ সালে আদালত টেক্সাসের একটি স্থানে দশ আজ্ঞা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়, কারণ সেখানে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছিল।
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের “সেপারেশন অফ চার্চ অ্যান্ড স্টেট”-এর ধারণা।
এই ধারণা অনুযায়ী, রাষ্ট্রের কোনো ধর্মকে সমর্থন করা উচিত নয় এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানেও সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
আর্কানসাস এবং টেক্সাসের মতো অন্যান্য রাজ্যেও অনুরূপ আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে লুইজিয়ানার আদালতের এই রায়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা শিক্ষা, ধর্ম এবং আইনের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।