প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: সত্যিই কি আপনার প্রয়োজন?

আমাদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা এবং খাদ্য তালিকায় এর সঠিক স্থান নিয়ে আজকাল অনেকেই সচেতন হচ্ছেন। বাজারেও এখন বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পাওয়া যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সবার জন্য প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে। বিশেষ করে, উন্নত জীবনযাত্রার দেশগুলোতে যেখানে মানুষের খাদ্যভ্যাস তুলনামূলক ভালো, সেখানে বাড়তি প্রোটিনের তেমন প্রয়োজন হয় না।

পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের গঠন, ক্ষয় পূরণ এবং বিভিন্ন অঙ্গের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে প্রোটিন অপরিহার্য। পেশি, হাড়, এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও প্রোটিনের জুড়ি নেই।

আমাদের শরীর অ্যামিনো অ্যাসিড নামক ছোট ছোট উপাদান থেকে প্রোটিন তৈরি করে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হতে পারলেও, কিছু আছে যা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। তাই, পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর পরামর্শ অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। অর্থাৎ, যদি কোনো পুরুষের ওজন ৭৫ কেজি হয়, তাহলে তার দৈনিক প্রায় ৬০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।

একজন নারীর ক্ষেত্রে, যদি ওজন ৬৫ কেজি হয়, তবে তার দৈনিক প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

তাহলে প্রশ্ন হলো, এই প্রয়োজনীয় প্রোটিন আমরা কোথা থেকে পাবো? আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো হলো ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, বিভিন্ন ধরনের ডাল (যেমন: মসুর ডাল, মুগ ডাল), বাদাম, বীজ ও সবজি।

আমাদের দেশের খাদ্যভাণ্ডারে প্রোটিনের সহজলভ্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকারের দেশি মাছ, মুরগি ও ডিম। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও শস্যতো আছেই।

নিরামিষভোজীদের জন্য মটরশুঁটি, সয়াবিন, এবং টফু’র মতো বিকল্প খাবারও প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে।

তবে, অতিরিক্ত প্রোটিন যুক্ত খাবার কেনার আগে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় এইসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি ও ফ্যাট থাকতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে তা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেশি গঠনে শুধু প্রোটিন গ্রহণই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করাটা এক্ষেত্রে খুব জরুরি। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে একটি চ্যালেঞ্জ জানানো যায়, যা পেশি গঠনে সহায়তা করে।

সুতরাং, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা সহজেই প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *