ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া বিলাসবহুল ‘বেয়েসিয়ান’ ইয়ট অবশেষে জল থেকে তোলা হলো।
ইতালির সিসিলি উপকূলের কাছে ডুবে যাওয়া একটি বিলাসবহুল ইয়ট, যা ২০২৩ সালের আগস্টে এক ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়েছিল, অবশেষে জল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় সাতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ প্রযুক্তি ব্যবসায়ী মাইক লিনচ এবং তার মেয়ে হান্নাহ।
১০ মাস পর, গত ২১শে জুন, ২০২৩ তারিখে উদ্ধারকারী সংস্থা টিএমসি মেরিন (TMC Marine)-এর তত্ত্বাবধানে ইয়টটি জল থেকে সম্পূর্ণভাবে তোলার কাজ সম্পন্ন হয়।
এই উদ্ধার অভিযানটি ছিল বেশ জটিল। ঘটনার পর পরই ১৫ জন আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও, পরে ডুবুরিরা ইয়টের ভেতর থেকে সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মাইক লিনচ, তার মেয়ে হান্নাহ, মরগান স্ট্যানলি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জোনাথন ব্লুমার, তার স্ত্রী জুডি ব্লুমার, নিউ ইয়র্ক সিটি-র আইনজীবী ক্রিস্টোফার মরভিলো এবং তার স্ত্রী, জুয়েলারি ডিজাইনার নেদা মরভিলো, এবং রাঁধুনি রিকার্ডো থমাস।
জানা যায়, এই দলটি মাইক লিনচের একটি মামলা জেতার আনন্দ উদযাপন করতে নৌভ্রমণে বেরিয়েছিল।
উদ্ধারকারী দল জানায়, ইয়টটিকে জল থেকে তোলার আগে এর ৭০ মিটার লম্বা মাস্তুলটি খুলে ফেলা হয়। এরপর বিশেষ ক্রেন ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে ধীরে ধীরে এটিকে খাড়া করার চেষ্টা করা হয়।
টিএমসি মেরিনের প্রধান প্রকৌশলী মার্কাস কেভ বলেন, “এটি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা একটি উদ্ধার কার্যক্রম। আমরা কর্মীদের নিরাপত্তা এবং পরিবেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাবের দিকে বিশেষ নজর রেখেছি।”
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তীব্র ঝড়ের কারণে ইয়টটি ডুবে যায়। ব্রিটিশ মেরিন অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (Marine Accident Investigation Branch) তাদের প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।
এছাড়া, ইয়টের কিছু দুর্বলতা সম্পর্কে নাবিকদের ধারণা ছিল না বলেও জানা যায়। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কিনা, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে।
ইতোমধ্যে, ইতালীয় কৌঁসুলিরা এই ঘটনায় একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছেন। ইয়টের ডেকে থাকা কর্মী, ক্যাপ্টেন এবং প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যার অভিযোগ আনা হতে পারে। তবে, এখনো পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
এই ঘটনার পর ইয়টের মালিকপক্ষ এবং নিহতদের পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এই ঘটনার ফলে নৌ নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও একবার নতুন করে সামনে এসেছে।
তথ্য সূত্র: পিপল