যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের নতুন বাজেট বিল: ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিভাজন গভীর হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি সম্প্রতি যে বাজেট বিলটি উত্থাপন করেছে, তা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিলটি একদিকে যেমন সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণির জন্য বিশাল কর ছাড়ের প্রস্তাব করেছে, তেমনই অন্যদিকে, কম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের ইঙ্গিত রয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে, রিপাবলিকান পার্টির দীর্ঘদিনের কৌশলগত দুর্বলতা আবারও সামনে চলে এসেছে – একদিকে তারা শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন চায়, অন্যদিকে তাদের অর্থনৈতিক নীতি সরাসরি সুবিধা দেয় সমাজের ধনী ব্যক্তিদের।
বাজেট বিলটি নিয়ে বিতর্কটি আরও তীব্র হওয়ার কারণ হল, গত ৩০ বছরে এই প্রথম রিপাবলিকানরা একইসাথে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এই বিলে একদিকে যেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরকারি ব্যয় কমানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তেমনই এতে রয়েছে উচ্চ আয়ের মানুষের জন্য বিশাল কর ছাড়ের ব্যবস্থা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিলটি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর রিপাবলিকান পার্টির নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বিলের মাধ্যমে, রিপাবলিকান পার্টি তাদের ভোটারদের মধ্যে বিভাজন আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
অন্যদিকে, তারা শ্রমিক শ্রেণির সমর্থন ধরে রাখতে চায়, অন্যদিকে, তাদের অর্থনৈতিক নীতিগুলি মূলত ধনী ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়।
এই বিলের প্রধান সমালোচকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমানো হবে, যা অন্তত ১ কোটি ৬০ লক্ষ আমেরিকানকে স্বাস্থ্যবীমা থেকে বঞ্চিত করবে। এছাড়া, খাদ্য সহায়তা খাতেও কাটছাঁট করা হতে পারে।
একইসঙ্গে, বিলটি শীর্ষস্থানীয় ০.১% উপার্জনকারীর জন্য বছরে ১ লক্ষ মার্কিন ডলারের বেশি কর ছাড়ের ব্যবস্থা করবে।
ডেমোক্র্যাটরা মনে করছেন, এই বিলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে তারা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সুবিধা পেতে পারে। ডেমোক্রেটদের কৌশলবিদরা বলছেন, “মেডিকায়েড”-এর মতো জনপ্রিয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি বন্ধ করে ধনী ব্যক্তিদের কর ছাড় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা তাদের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হবে।
তবে, রিপাবলিকানরাও এই অভিযোগের মোকাবিলায় প্রস্তুত। তারা তাদের কর পরিকল্পনার জনমুখী দিকগুলো তুলে ধরছেন এবং “মেডিকায়েড”-এর অর্থ হ্রাসকে কল্যাণ সংস্কার হিসেবে তুলে ধরছেন, যা সবচেয়ে বেশি нуждаগ্রস্তদের সুবিধা দেবে।
তারা মনে করছেন, এই বিলের মাধ্যমে তারা শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের মন জয় করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিলটি রিপাবলিকানদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমানো হবে, তেমনই অন্যদিকে, ধনী ব্যক্তিদের জন্য কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে।
এর ফলে, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী জোটে পরিবর্তন এসেছে। অতীতে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের উপর নির্ভরশীলতা বেশি থাকলেও, বর্তমানে তারা সংখ্যালঘু শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন চাইছে।
এই শ্রেণির মানুষেরা স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে, রিপাবলিকানদের সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাদের এই বিলের পক্ষে জনমত তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে, তাদের ভোটারদের মধ্যে থাকা বিভাজন দূর করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রিপাবলিকানদের এই বিল নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এর আগে যখন তারা একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল, তখন তারা জনসমর্থন হারায়।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৫ সালের বাজেট বিতর্কে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।
সবশেষে, এই বিলটি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, অনেক আমেরিকান এই বিলের বিরোধিতা করছেন।
তাদের আশঙ্কা, এই বিলের ফলে স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমানো হবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন