শিরোনাম: পশ্চিমা বিশ্বে অনলাইনে জাদুচর্চা: এটসিতে বাড়ছে স্পেল ও জাদুকরদের চাহিদা
বিশ্বায়নের যুগে, বিভিন্ন সংস্কৃতি আর তাদের রীতিনীতিগুলো এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলেছে, যার ফলে দূরের অনেক কিছুই এখন আমাদের কাছে পরিচিত।
সম্প্রতি, পশ্চিমা বিশ্বে অনলাইনে জাদুচর্চা বা স্পেল-এর (মন্ত্র) প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে এটসিতে (Etsy) সক্রিয় কিছু জাদুকরের কারণে।
এটসি মূলত একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পী ও কারুশিল্পীরা তাদের পণ্য বিক্রি করেন।
তবে এখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ‘স্পেল’ বা মন্ত্র, যা ব্যবহার করে সৌভাগ্য বৃদ্ধি, প্রেম অথবা এমনকি কারও ক্ষতি করারও চেষ্টা করা হয়।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এইসব জাদুকররা ক্লায়েন্টদের জন্য এই ধরনের পরিষেবা সরবরাহ করছেন।
এই প্রসঙ্গে, ‘পিপল’ ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, কেউ হয়তো ভালোবাসার মন্ত্র চেয়েছেন, আবার কেউ চেয়েছেন ব্যবসায় সাফল্যের জন্য সহায়তা।
এসব জাদুকরদের একজন, যিনি পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন, জানিয়েছেন, শুরুতে তিনি কেবল ট্যারো কার্ড রিডিং এবং ক্রিস্টাল বা ঐন্দ্রজালিক সরঞ্জাম বিক্রি করতেন।
কিন্তু ধীরে ধীরে ক্লায়েন্টদের চাহিদা বাড়তে থাকে, এবং তারা তাদের জীবনকে প্রভাবিত করার জন্য মন্ত্র পাঠের অনুরোধ করতে শুরু করে।
এটসিতে এই ধরনের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তাই অনেক জাদুকর ডিজিটাল ফাইল, যেমন – মন্ত্র পাঠের সময়কার ছবি অথবা একটি স্বাক্ষরিত সনদ প্রদান করেন, যা তাদের কাজের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই জাদুকরদের মতে, ক্লায়েন্টরা সাধারণত তাদের জীবন এবং চারপাশের জগৎকে পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রের সাহায্য চান।
এর মধ্যে রয়েছে চেহারা পরিবর্তন, কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীকে আকর্ষণ করা ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই ধরনের পরিষেবাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো নিজের ভেতরের পরিবর্তন ঘটানো সংক্রান্ত মন্ত্রের।
অনেক ক্লায়েন্ট চান, তারা যেন আরও সুন্দর হয়ে ওঠেন, অথবা তাদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটুক।
জাদুকরেরা এই ধরনের পরিবর্তনের জন্য আত্ম-প্রেম এবং আত্ম-বিশ্বাসের মন্ত্র পাঠ করেন।
তবে, এই ধরনের অনলাইন পরিষেবার কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে আসা অসংখ্য অনুরোধ সামলানো এবং তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো শোনা বেশ কঠিন।
জাদুকরেরা তাদের ক্লায়েন্টদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, জাদু বা মন্ত্রের ফল পেতে হলে নিজেরও চেষ্টা করতে হয়।
এই প্রসঙ্গে, আলেক্সিস টোলেন্তিনো নামের একজন নারী জানান, ২০১৯ সালে তিনি ভালোবাসার মন্ত্রের জন্য একজন জাদুকরের সাহায্য নিয়েছিলেন।
তার মতে, জাদুচর্চা অনেকটা ‘কম ঝুঁকির’ মতো।
যদি অন্য সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে এটি চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে জাদুচর্চা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচিতি পাচ্ছে।
তবে, এখানে নেতিবাচক বিষয়ও রয়েছে।
অনেকে তাদের প্রাক্তন সঙ্গীর ক্ষতি করার জন্য অভিশাপ চেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে, সারা মাহের নামে একজন ট্যারো পাঠক জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম তাকে অন্যান্য জাদুকরদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করেছে।
তার মতে, অনেক মানুষ কঠিন সময়ে আশ্রয় খুঁজছেন এবং তারা এমন কিছু বিষয়ের প্রতি ঝুঁকছেন, যা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না।
সবশেষে, জাদুচর্চার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মনে করেন, এটি একটি শক্তিশালী কমিউনিটি তৈরি করতে পারে, যেখানে মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং পরস্পরকে সমর্থন করে।
তথ্য সূত্র: পিপল