ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখন বেশ উত্তপ্ত। তেহরান কী পদক্ষেপ নেবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের হাতে অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। খবর অনুযায়ী, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে, তার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
ইরানের সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে— মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো, আন্তর্জাতিক নৌ-চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া, এমনকি পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা আরও জোরদার করা।
এছাড়া, ইসরায়েলের উপর হামলা অব্যাহত রাখা এবং সাইবার হামলা বা সন্ত্রাসবাদের মতো কৌশল অবলম্বন করারও সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের সামরিক সক্ষমতা বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও, প্রতিশোধ নেওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের এখনও রয়েছে।
তারা এমন কিছু করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপ্রত্যাশিত হবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) এই ধরনের হামলার পরিকল্পনা করতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
এই প্রণালী পারস্য উপসাগরকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্বে তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ।
প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল এই পথ দিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে তেলের দাম বেড়ে গেলে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
কারণ, বাংলাদেশ তেল আমদানির জন্য অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে, দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা।
তবে, কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, ইরান হয়তো সরাসরি বড় ধরনের কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না। তারা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদী একটি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, যা তাদের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হবে।
আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ইরানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা আরও বাড়তে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে ইরান হয়তো দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরির দিকে ঝুঁকবে।
যদি এমনটা হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনাও এখনো একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর ওপর।
তবে, মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থির পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন