ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান: ট্রাম্প প্রশাসনের দুই প্রধান ব্যক্তিত্বের ভিন্ন ভূমিকা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সর্ববৃহৎ সামরিক অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছেন দু’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
তাঁরা হলেন, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব) পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান ড্যান কেইন।
সম্প্রতি পেন্টাগনের ব্রিফিং রুমে তাঁরা এই অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ছিলেন অপেক্ষাকৃত বেশি আত্মবিশ্বাসী।
তিনি এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই অভিযানকে ‘বিপুল সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি জানান, এই অভিযানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে এবং ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রের সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বক্তৃতায় হেগসেথের পোশাকের সাথে যুক্ত ছিল একটি আমেরিকান পতাকার পকেট স্কয়ার।
অন্যদিকে, জেনারেল কেইন সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে ঠান্ডা ও সতর্কভাবে এই অভিযানের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন।
তিনি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় চালানো হামলার সময়রেখা উল্লেখ করেন এবং সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
কেইন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এই দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার ভিন্ন ধরনের উপস্থাপনা ট্রাম্প প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে।
হেগসেথ সাধারণত প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যা টেলিভিশন দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে দৃশ্যমান।
অন্যদিকে কেইন পর্দার আড়ালে থেকে একজন নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
জানা যায়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানোর সময় ট্রাম্প কয়েকজন উপদেষ্টার ওপর নির্ভর করেছিলেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন জেনারেল মাইকেল কুরিলা, যিনি ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান এবং সিআইএ-র পরিচালক জন র্যাটক্লিফ।
এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক ছিলেন।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানে হেগসেথের দৃশ্যমানতা উল্লেখযোগ্য।
কারণ, এর আগে তিনি একটি ‘সিক্রেট চ্যাট’ বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, যেখানে তিনি ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।
যদিও ট্রাম্প তখন হেগসেথের পক্ষ নিয়েছিলেন।
তবে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সাফল্যের পর হেগসেথকে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে দেখা গেছে।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, হেগসেথ এই অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ‘অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত’ ছিলেন।
এমনকি, প্রেসিডেন্টকে নিয়মিতভাবে অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন তিনি।
এই অভিযানের চূড়ান্ত অনুমোদন আসে শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায়, যখন হেগসেথ প্রেসিডেন্টকে ফোন করে বিষয়টি চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।