ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে কতটা সফল?

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন বিমান হামলার পর দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের কতটা ধ্বংস হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও দাবি করেছেন যে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, তবে ইসফাহানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করা হয়নি। এর ফলে হামলার চূড়ান্ত ফল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইসফাহানে ইরানের প্রায় ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ভূগর্ভে মজুদ করা ছিল। এই স্থানে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হলেও, অন্য দুটি লক্ষ্যবস্তুর মতো এখানে ‘bunker-buster’ বোমা ব্যবহার করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এই তথ্য জানান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও ফোরদো’র ভূগর্ভস্থ স্থাপনায়, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সেন্ট্রিফিউজ ছিল, সেখানে ১২টি ‘bunker-buster’ বোমা ব্যবহার করে ধ্বংস করা হয়েছে, কিন্তু ইসফাহানের স্থাপনা অক্ষত থাকায় ট্রাম্পের ‘সন্ত্রাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ ইরানের পারমাণবিক হুমকি বন্ধের ঘোষণা কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওয়েপনস বিশেষজ্ঞ এবং মধ্যবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক জেফরি লুইস বলেছেন, “যদি এতটুকুই হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হয় ইরানের হাতে এখনো ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পুরো মজুদ রয়েছে, যা ইসফাহানের অক্ষত টানেলগুলোতে সংরক্ষিত আছে।” স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানা গেছে ইসফাহান স্থাপনার উপরিভাগে বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে ভূগর্ভস্থ অংশে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেছেন, প্রশাসন আগামী কয়েক সপ্তাহে এই জ্বালানি নিয়ে কাজ করবে এবং ইরানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি যে তাদের আর উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়ামে পরিণত করার ক্ষমতা নেই এবং এটাই ছিল মূল লক্ষ্য।”

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ইসফাহানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে এখনো একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ ইরানের হাতে এখনো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ আছে এবং তাদের সেন্ট্রিফিউজ তৈরির সক্ষমতাও বিদ্যমান।

মার্কিন সামরিক পরিকল্পনাকারীরা কেন ইসফাহানে ‘bunker-buster’ বোমা ব্যবহার করেননি, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই বোমাগুলো গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মার্কিন কর্মকর্তার মতে, গভীর টানেলগুলো ধ্বংস করার জন্য এই বোমাগুলোর সক্ষমতা নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিল।

ফোরদোর স্থাপনা ধ্বংস করার ক্ষেত্রেও এই বোমাগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে ইসফাহানের গভীর টানেলগুলো ধ্বংস করা আরও কঠিন ছিল বলে জানা গেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *