ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের সন্তানের স্কুলে ফোন, কান্না থামানো দায়!

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিিল্যান্ডে বসবাসকারী আট সন্তানের জননী ৪৩ বছর বয়সী মিস্তি ডি লা ক্রুজের জীবন যেন এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি লড়াই করছেন। এই মরণব্যাধি তাঁর জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বাধীনতা।

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে গিয়ে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি স্কুলে মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মে মাসের এক সকালে মিস্তির ১০ বছর বয়সী ছেলের স্কুল থেকে ফোন আসে। স্কুলের নার্স জানান, তার ছেলে ক্লাসে খুব ক্লান্ত থাকে এবং রাতে মায়ের কিছু হয়ে গেলে কী হবে—এই ভয়ে সে ঘুমাতে যেতে ভয় পায়। এই কথা শুনে মিস্তির হৃদয়ে যেন গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।

ক্যান্সারের চিকিৎসার ধকল সামলে পরিবারকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করার মধ্যেই সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটছে তাঁর।

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক চাপ অনেক বেশি উল্লেখ করে মিস্তি বলেন, একজন মা হিসেবে সব সময় সন্তানদের জন্য শক্ত থাকতে চান তিনি। কিন্তু যখন দেখেন, ধীরে ধীরে তিনি বদলে যাচ্ছেন, তখন কষ্ট হয়।

তিনি জানান, এই কঠিন সময়ে সন্তানদের সাহস জুগিয়ে যেতে হয় তাঁকে।

চিকিৎসার কারণে মিস্তির শরীরে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে নিজের কাপড় পর্যন্ত ধুতে পারেন না, অন্যের সাহায্য নিতে হয়।

স্নায়ু দুর্বলতার কারণে তীব্র ব্যথায় সোজা হয়ে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি, সামান্য অসুস্থতাও তাঁর জন্য জীবনহানির কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। পরিবারের খরচ চালানোর জন্য একটি ‘গো ফান্ড মি’ তৈরি করেছেন তিনি।

নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে মিস্তি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে খুবই অসহায় ও অকেজো মনে হয়।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিস্তিকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সন্তানেরা। অসুস্থতা সম্পর্কে সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেন, যা তাদের মনে সাহস যোগায়।

মিস্তি মনে করেন, মা হিসেবে সন্তানদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব অনেক। তিনি চান, তাঁর সন্তানরা যেন কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারে।

তাদের মধ্যে ভয়ের কোনো ছায়া থাকুক, তা তিনি চান না।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি যা শিখেছেন, তা হলো—সন্তানদের সঙ্গে সব কথা খুলে বলা, তাদের অনুভূতিগুলো বুঝতে চেষ্টা করা এবং সাহায্য চাইতে দ্বিধা না করা।

তাঁর মতে, এই কঠিন সময়ে পরিবারের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মিস্তির মতে, ক্যান্সারের চিকিৎসা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক, আবেগিক এবং আর্থিক—সব দিকেই প্রভাব ফেলে।

তাই, তিনি অন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই লড়াইয়ে সাহস হারানো যাবে না।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *