ইরানে বোমা: তেলের দামে আগুন, বাড়ছে কি যুদ্ধের দামামা?

যুক্তরাষ্ট্রের ইরান জুড়ে সামরিক অভিযানের পর বিশ্বজুড়ে তেলের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জ্বালানি তেলের মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার গভীর রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরেই তেলের বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তেলের ফিউচার চুক্তি (future contract) প্রায় ৩.৬ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৭৬.৪৭ ডলারে পৌঁছেছে।

অপরদিকে, ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও বেড়েছে, যা বর্তমানে ব্যারেল প্রতি ৭৪.৫৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়লে বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডাউ ফিউচার ০.৬ শতাংশ, এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার ০.৬ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচার ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

তবে, ইসরায়েলের শেয়ার বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দেশটির শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যেখানে তেল আবিব ১২৫ সূচক ১.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯১৯.৬২-তে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়লে হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রণালী দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তেল সরবরাহ করা হয়।

কোনো কারণে যদি এই পথে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে, যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (US Energy Information Administration) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে সমুদ্রপথে যে পরিমাণ তেল বাণিজ্য হয়েছে, তার ২৫ শতাংশেরও বেশি হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবহন করা হয়েছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রই প্রতিদিন প্রায় ৫ লক্ষ ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে আমদানি করে, যা তাদের মোট অপরিশোধিত তেল এবং কনডেনসেট আমদানির ৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু আমদানি নির্ভর, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। ফলে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *