আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন প্রভাবশালী (Influencer), কুইনলিন ব্ল্যাকওয়েল, সম্প্রতি তাঁর ত্বকের যত্নে বুকের দুধ ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনলাইন জগতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সৌন্দর্যচর্চার এমন অভিনব পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডার্মাটোলজিস্ট ড. নানা বোয়াকি।
কুইনলিন ব্ল্যাকওয়েল, যিনি মূলত একজন মডেল এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বেশ পরিচিত মুখ, সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর ত্বকের যত্নের গোপন রহস্য প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, তাঁর বোনের বুকের দুধ ব্যবহার করেন তিনি। “আমার বোন বিগত পাঁচ বছর ধরে মা হয়েছেন, আর আমি তাঁর বুকের দুধ কিনে আমার বাথ এবং ফেস মাস্কে ব্যবহার করি।
আপনি যদি সেরা মানের স্কিন কেয়ার উপাদান পেতে চান, তবে এটি ব্যবহার করতে পারেন,” তিনি বলেন।
যদিও বুকের দুধ ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই নতুন এবং কিছুটা অপ্রত্যাশিত, তবে ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. নানা বোয়াকি এর সম্ভাব্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
তাঁর মতে, বুকের দুধে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। “বুকের দুধে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষ করে, এটি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক,” তিনি জানান।
ডা. বোয়াকির মতে, বুকের দুধে প্রধানত চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যা ত্বকের জন্য উপকারী।
এগুলো হলো: হুই এবং কেসিন নামক প্রোটিন, ভিটামিন এ এবং ই। এই উপাদানগুলো ত্বককে শান্ত করে এবং রক্ষা করে।
এছাড়াও বুকের দুধে রয়েছে পামিটিক অ্যাসিড এবং ওলিক অ্যাসিডের মতো ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে এবং ত্বকের সুরক্ষা স্তরকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, এতে এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর (EGF) বিদ্যমান, যা ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
“এই উপাদানগুলো একত্রিত হয়ে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে, ত্বককে শান্ত করতে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে,” যোগ করেন ডা. বোয়াকি।
তবে, বুকের দুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন এই ত্বক বিশেষজ্ঞ।
তিনি সবসময় দুধের তাজা অবস্থা এবং অল্প পরিমাণে ব্যবহার করে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরি।
এছাড়াও, দুধ সংরক্ষণে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, কারণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বুকের দুধ ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে ড. বোয়াকি কোলোস্ট্রাম-ভিত্তিক পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা সাধারণত গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয়।
এছাড়াও, তিনি সেরামাইড, কোলেস্টেরল বা ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ অথবা পেপটাইড এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর যুক্ত উপাদান সমৃদ্ধ ত্বকচর্চার পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তাঁর মতে, এই উপাদানগুলো ত্বকের পুষ্টি যোগায় এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
ডা. বোয়াকি তাঁর নিজস্ব ‘কোকো ব্যারিয়ার ক্রিম’-এর উদাহরণ দেন, যেখানে পেপটাইড এবং সেরামাইডের মতো উপাদান রয়েছে।
এই উপাদানগুলো বুকের দুধের মতোই উপকারী এবং এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সহায়তা করে।
সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ধরনের পণ্য বেশি উপযোগী হতে পারে।
ডা. বোয়াকি আরও বলেন, “বুকের দুধ ত্বককে শান্ত, আর্দ্র রাখতে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে, তবে নির্দিষ্ট ত্বকের সমস্যা সমাধানে এটি ডার্মাটোলজিক্যাল পরীক্ষিত স্কিন কেয়ারের বিকল্প হতে পারে না।
তথ্য সূত্র: পিপল