ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস: বোমা তৈরির দৌড় কি আরও তীব্র?

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে তেহরান পরমাণু বোমা তৈরির আরও কাছাকাছি চলে যেতে পারে।

পশ্চিমি সামরিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মার্কিন বোমার আঘাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই পুরোপুরি বলা যাচ্ছে না। তবে ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও ইরানের কট্টরপন্থীরা এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে আরও বেশি আগ্রহী হতে পারে।

তাদের মতে, এমন বিধ্বংসী হামলার বিরুদ্ধে এটিই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

এমনকি ইরানের পক্ষ থেকে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইস্তাম্বুলে এক সম্মেলনে বলেছেন, “NPT আমাদের রক্ষা করতে পারছে না, তাহলে কেন ইরান বা পরমাণু শক্তি পেতে আগ্রহী অন্য দেশগুলো এর ওপর নির্ভর করবে?”

ইতিমধ্যে, ইরানের অনেক আইনপ্রণেতাও এই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি তাই হয়, তবে এটিকে পরমাণু বোমা তৈরির চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

অবশ্য, ক্ষমতা এবং ইচ্ছার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। মার্কিন হামলার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা স্যাটেলাইট চিত্র থেকে স্পষ্ট। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে তারা হয়তো তাদের পরমাণু স্থাপনা মেরামত বা পুনর্গঠন করতে পারে।

এছাড়া, ইসরায়েলের হামলায় বেশ কয়েকজন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হলেও, দেশটির কারিগরি জ্ঞান এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা আইএইএ (IAEA)-এর কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের তৈরি করা পরমাণু উপাদান, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামও রয়েছে, যা অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি, সেগুলোর অবস্থান সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ফোরদো, নাটাঞ্জ ও ইস্ফাহানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো আগে থেকেই ‘খালি’ করা হয়েছিল। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এসব উপাদান হয়তো অন্য কোনো গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অজানা।

ট্রাম্প সম্ভবত এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হামলার পর তিনি বলেছিলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের অত্যাচারী ইরানকে এখন শান্তি স্থাপন করতে হবে।” কিন্তু এখন পুরো অঞ্চল জুড়ে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে ইসরায়েল, মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং হরমুজ প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলোতে হামলার সম্ভাবনা বাড়ছে।

ইউরোপীয় এক কূটনীতিকের মতে, জেনেভায় ইউরোপীয় এবং ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছিল, তা ছিল আলোচনার একটি সুযোগ। কিন্তু এখন আমেরিকানরা সেই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *