ইরানে মার্কিন বিমান হামলা: ট্রাম্পের ‘সরকার পরিবর্তনের’ ইঙ্গিত, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে মধ্যপ্রাচ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো হামলা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। হামলার কয়েক দিন পরও এর ফল কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প যদিও একে বিশাল বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছেন, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এমনকি তিনি এখন ইরান সরকারের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়। এই হামলায় ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক ‘বঙ্কার-বাস্টিং’ বোমা, যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য।
এই অভিযানের ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প যদিও দাবি করেছেন, হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ এত সহজে নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। ইরানের পক্ষ থেকে এর প্রতিশোধ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডাররা ইতোমধ্যে প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিক এবং সামরিক বাহিনীর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
তবে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করা গেছে?
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি যে, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে, হামলার ফল উল্টো হতে পারে।
ইরান যদি প্রতিশোধ হিসেবে দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে বিশ্ব আরও একটি ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় বিজয়। তবে এর ফলস্বরূপ ইরানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনীর ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে এবং এর ফলে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন আসতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও এর রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।
তবে অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের আগ্রাসী নীতি আমেরিকার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকে আসা প্রতিক্রিয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি সামরিকভাবে জবাব দেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বাড়বে। তবে ইরান যদি সংযত থাকে, তাহলে আলোচনার পথ খোলা থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে। ইরান হয়তো ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য আরও বেশি মরিয়া হয়ে উঠবে।
সব মিলিয়ে, ইরানের ওপর মার্কিন হামলা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখন গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন