মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত! চিলির আন্দিজ পর্বতে অবস্থিত ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি (Vera C. Rubin Observatory) সম্প্রতি মহাকাশের কিছু অত্যাশ্চর্য ছবি প্রকাশ করেছে। এই ছবিগুলো মহাবিশ্বের গভীরতা এবং নক্ষত্রজগতের এক দারুণ চিত্র তুলে ধরেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রধান আকর্ষণ হল এর বিশাল ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা, যার রেজোলিউশন ৩২০০ মেগাপিক্সেল। এর সাথে আছে ২৭ ফুট প্রশস্ত একটি প্রধান আয়না।
এই ক্যামেরা বিশাল আকারের আকাশ অঞ্চলের ছবি তুলতে সক্ষম এবং প্রতিটি ছবি ৪০টি পূর্ণিমার সমান এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তারা রাতের আকাশের একটি বিস্তারিত ‘চলচ্চিত্র’ তৈরি করতে পারবেন।
এই ‘চলচ্চিত্র’ ব্যবহার করে সময়ের সাথে মহাবিশ্বের পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
প্রকাশিত ছবিগুলোতে নীহারিকা এবং গ্যালাক্সির অসাধারণ দৃশ্য দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ল্যাগুনা নীহারিকা (Lagoon Nebula) এবং ট্রাইফাইড নীহারিকার (Trifid Nebula) ছবিগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘগুলো পৃথিবী থেকে যথাক্রমে ৪,৩৫০ এবং ৪,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ছবিতে গ্যালাক্সিগুলোর পারস্পরিক সংঘর্ষ এবং তাদের গঠন প্রক্রিয়াও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণবস্তু এবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে গবেষণা করা।
এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি আগামী ১০ বছর ধরে রাতের আকাশের ছবি তুলবে এবং প্রতি রাতে প্রায় ২০ টেরাবাইট ডেটা তৈরি করবে।
এই বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করার জন্য কম্পিউটার অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হবে, যা বিজ্ঞানীদের বিরল ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ডেটা বিশ্লেষণ করে তারা সৌরজগতের গ্রহাণু এবং বিপদজনক গ্রহাণু সনাক্ত করতে পারবেন, সেই সাথে দূরবর্তী গ্যালাক্সিতে বিস্ফোরিত নক্ষত্র এবং ব্ল্যাকহোল সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা সি. রুবিনের (Vera C. Rubin) নামে। তিনি প্রথম কৃষ্ণবস্তুর প্রমাণ দেন।
পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি সম্ভবত ২০২৫ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে এবং এটি মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক