নতুন বছর! মুসলিমদের জীবনে হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব…

আসন্ন হিজরি নববর্ষ, মুসলিম বিশ্বে নতুন করে উপলব্ধির বার্তা নিয়ে আসে। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নতুন বছর শুরু হয় মহররম মাসের প্রথম দিন থেকে। আত্ম-উন্নয়ন এবং আধ্যাত্মিকতার এক বিশেষ সুযোগ নিয়ে আসে এই সময়টি, যা পবিত্র শহর মক্কাতে হজের সমাপ্তির পরে আসে।

সাধারণত, হিজরি নববর্ষের সূচনা হয় চান্দ্র মাসের প্রথম দিনের চাঁদ দেখার মাধ্যমে। এই বছর, ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২৬শে জুন তারিখের আশেপাশে ১৪৪৭ হিজরি বর্ষ শুরু হতে পারে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাস ও উৎসবের তারিখগুলি প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়, যেমনটা হয় পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের ক্ষেত্রে।

হিজরি ক্যালেন্ডারের ইতিহাস ফিরে তাকালে দেখা যায়, এটি শুরু হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দে। এই বছর, ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, যা ‘হিজরতের বছর’ হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনা মুসলিম সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যা ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের একত্রিত হতে সাহায্য করেছিল।

হিজরি নববর্ষ উদযাপন সাধারণত শোক ও আত্ম-অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। মহররম মাসকে ইসলামে পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। এই সময়টিতে মুসলমানরা বেশি করে ইবাদত করেন, দান করেন এবং নিজেদের আত্মসমালোচনা করেন।

অনেক দেশে, যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো এবং সিরিয়াতে হিজরি নববর্ষ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।

যদিও হিজরি নববর্ষের উদযাপন সাধারণত শোকের আবহে পালিত হয়, তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এর পালনে ভিন্নতা দেখা যায়। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য মহররম মাসের প্রথম দশ দিন শোকের সময়।

এই সময়ে তারা কারবালার যুদ্ধ সহ বিভিন্ন ঘটনার স্মরণে শোক পালন করেন। এই মাসের দশম দিনে, অর্থাৎ আশুরার দিনে, শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা শোক মিছিলে অংশ নেন, কালো পোশাক পরিধান করেন এবং বুক চাপড়ান।

অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানরা আশুরার দিনটি নফল রোজা রাখার মাধ্যমে পালন করেন। এই দিনে তারা হযরত মুসা (আ.)-এর ঘটনাকে স্মরণ করেন, যখন তিনি লোহিত সাগর অতিক্রম করেছিলেন।

বর্তমানে, ফিলিস্তিন ও গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান এবং ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের কারণে হিজরি নববর্ষের উদযাপন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তেহরানে আশুরার শোক মিছিলে সাধারণত ব্যাপক জনসমাগম হয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে শহরটিতে জনশূন্যতা দেখা যাচ্ছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যা মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর শোকের কারণ।

গত বছর অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের পর, এই হিজরি নববর্ষ দ্বিতীয় বারের মতো পালিত হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে নিহত হওয়াদের স্মরণে মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *