সম্প্রতি বিভিন্ন প্রযুক্তি ও মিডিয়া কোম্পানি এবং সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ হওয়াটা স্বাভাবিক। চাকরি হারানো নিঃসন্দেহে একটি কঠিন পরিস্থিতি, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, এই মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মোকাবিলা করার কিছু উপায় রয়েছে। যদি আপনিও সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন, তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো— প্রথমে পরিস্থিতিটা শান্তভাবে গ্রহণ করুন এবং এরপর নতুন চাকরির সন্ধানের পরিকল্পনা করুন।
আর্থিক পরামর্শদাতা লিন্ডসে ব্রায়ান-পডভিন বলেন, “চাকরি চলে যাওয়াকে ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার কিছু নেই। এটি আপনার যোগ্যতা বা কর্মদক্ষতার প্রতিফলন নয়। বিশেষ করে আমেরিকাতে, আমাদের কাজ আমাদের পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।”
চাকরি হারানোর পর আপনার আর্থিক দিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
- সময় নিন, পরিস্থিতি বোঝার জন্য: চাকরি হারানোর কারণে অনেক মানসিক চাপ ও আর্থিক দুশ্চিন্তা হতে পারে। তাই আবেগগতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সময় নেওয়া জরুরি। ব্রায়ান-পডভিন বলেন, “রাগ বা দুঃখ— এমন বিভিন্ন অনুভূতিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন।”
দুঃখ, அதிবাস্তবতা, রাগ— যে কোনো অনুভূতি অনুভব করার জন্য নিজেকে সময় দিন, যা আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
- বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করুন: ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার জন্য আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। ক্যারিয়ার কোচ মার্লো লিয়ন্স পরামর্শ দেন, আপনার বাজেট থাকলে, তা ভালোভাবে দেখুন এবং খরচ কমানোর কোনো সুযোগ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করুন।
তিনি আরও পরামর্শ দেন যে, আপনি যদি কোনো ক্ষতিপূরণ পান, তবে কত দিনের জন্য তা পাবেন, সে বিষয়ে অবগত থাকুন।
- সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করুন: দ্রুত সম্ভব সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করুন। যদিও এই ভাতার পরিমাণ আপনার বেতনের সমান নাও হতে পারে, তবে এটি আপনাকে কিছু সময়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারে। শ্রম দপ্তর এই বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- নিজেকে মনে রাখুন আপনার চাকরিই সব নয়: চাকরি চলে গেলে আত্ম-মর্যাদাবোধে আঘাত লাগতে পারে। ব্রায়ান-পডভিন এক্ষেত্রে নিজের ভালো গুণগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে বলেন, যা আপনাকে ব্যক্তি হিসেবে মূল্যবান করে তোলে। তিনি এটিকে “অ-আর্থিক সম্পদ তালিকা” হিসেবে অভিহিত করেন।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেন, “আমি যদি আমার অ-আর্থিক সম্পদ তালিকা তৈরি করি, তবে সেখানে আমি লিখব— আমি একজন ভালো সঙ্গী এবং মজাদার একজন খালা।”
ব্রায়ান-পডভিন তার ক্লায়েন্টদেরও এই তালিকা তৈরি করতে বলেন, যা তাদের মনে করিয়ে দেবে— আত্ম-মূল্য তাদের মোট সম্পদের একটি অংশ।
- খরচ কমানোর পরিকল্পনা করুন: চাকরি হারালে আপনার ব্যয়ের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। “ইউ নিড আ বাজেট” (YNAB) -এর প্রতিষ্ঠাতা জেসি মেচাম বলেন, “চাকরি হারানোর পর প্রতিটি টাকার দিকে আগের চেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়াটা জরুরি।”
YNAB-এর বাজেট তৈরির একটি কৌশল হলো— প্রতিটি টাকার একটি নির্দিষ্ট কাজ দেওয়া, যেমন— ঘর ভাড়া, মুদি দোকানের খরচ অথবা সঞ্চয় করা।
ব্রায়ান-পডভিন আরও পরামর্শ দেন, খরচ কমানোর সময় নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। কারণ, এতে আপনার আনন্দদায়ক কিছু কাজ হয়তো বাদ দিতে হতে পারে। তাই নিজেকে মনে করিয়ে দিন— এটি আপনার জীবনযাত্রায় একটি সাময়িক পরিবর্তন, যা স্থায়ী নয়।
- ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা: নতুন চাকরি খোঁজার সময় ক্রেডিট কার্ডের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। মেচামের মতে, “নতুন চাকরি পেতে যদি আপনার বেশি সময় লাগে, তবে সেই ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
বেকারত্ব একটি সাময়িক অবস্থা, তাই মেচাম খরচ কমানোর পরামর্শ দেন, যাতে ক্রেডিট কার্ডের ওপর নির্ভর করতে না হয়।
- স্থানীয় সহায়তা নিন: আপনার এলাকার কোনো খাদ্য ব্যাংক অথবা কোনো বিশেষ সহায়তা প্রোগ্রামের সুবিধা নিতে পারেন। ব্রায়ান-পডভিন বলেন, “অনেক স্থানীয় কমিউনিটি প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধের জন্য অস্থায়ী সহায়তা দিয়ে থাকে, যেমন— বিদ্যুৎ বা পানির বিল।”
USA.Gov ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন প্রোগ্রামের তথ্য এবং আবেদনের নিয়মাবলী জানতে পারবেন।
- চাকরির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করুন: নতুন চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আপনার পেশাগত লক্ষ্যগুলো আগের মতোই আছে কিনা, তা যাচাই করুন। মার্লো লিয়ন্স পরামর্শ দেন, আপনি যদি একই পেশায় কাজ করতে চান, তবে আপনার জীবনবৃত্তান্তকে “ভবিষ্যত-মুখী” করুন। অর্থাৎ, আপনি ভবিষ্যতে কী করতে চান, সে বিষয়ে ধারণা দিন, শুধু অতীতে কী করেছেন, তা দেখালে চলবে না।
লিয়ন্স আরও বলেন, “আপনি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সেই বিশেষ চাকরিটিতে কী ধরনের মূল্যবান কাজ করতে পারেন, যা অন্য কোনো প্রার্থী পারবে না, তা নিয়োগকর্তাকে দেখাতে হবে।”
পাশাপাশি, তিনি আপনার নেটওয়ার্ক সক্রিয় করার জন্য লিংকডইন-এর মাধ্যমে প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বা শিল্প-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। অনলাইনে বিভিন্ন সার্টিফিকেশন কোর্স করাও আপনাকে একজন ভালো প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
- একটি রুটিন তৈরি করুন এবং তা মেনে চলুন: একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এবং নিয়মিত চাকরির জন্য আবেদন করতে সহায়তা করবে।
আপনার দিনটিকে এমনভাবে সাজান, যাতে আপনি নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ করেন, ব্যায়াম করেন এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে চাকরির জন্য আবেদন করেন। ব্রায়ান-পডভিন বলেন, “যখন আমরা চাকরি হারাই, তখন বিশেষ করে যদি এটি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে, তবে বেকারত্ব আমাদের জন্য উদ্দেশ্যহীন মনে হতে পারে।”
এসময় নিজেকে একা করে ফেলবেন না। আপনার কাছের মানুষদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন নিন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস