যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট খুব শীঘ্রই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিতে যাচ্ছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ এবং বিভিন্ন নাগরিক অধিকারের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই রায়গুলো শুধু বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা আমেরিকান সমাজে রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কের নতুন দিগন্তও উন্মোচন করতে পারে।
খবর অনুযায়ী, শীর্ষ আদালত যেসব গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিতে প্রস্তুত হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, বিদ্যালয়ে এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) বিষয়ক বই, স্বাস্থ্যসেবা এবং আরও কিছু বিষয়।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সকলের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্বের যে বিধান, তাকে সীমিত করা হোক।
এই মামলার রায়ের ওপর নির্ভর করছে, কোনো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নাগরিকত্বের মতো মৌলিক বিষয়ে পরিবর্তন আনা যায় কিনা। যদি আদালত ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তবে এর প্রভাব শুধু এই একটি মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভবিষ্যতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আরও বাড়তে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুল ডিস্ট্রিক্টে এলজিবিটিকিউ বিষয়ক বই পড়ানো নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তি। মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুল তাদের পাঠ্যক্রমে এই ধরনের কিছু বই অন্তর্ভুক্ত করে, যা কিছু অভিভাবকের ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী ছিল।
অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সন্তানদের এই বইগুলো পড়তে বাধ্য করছে, যা তাদের ধর্মীয় অধিকারের লঙ্ঘন। এই মামলার রায় অভিভাবকদের অধিকার এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হবে, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।
স্বাস্থ্যখাত নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচারাধীন। এই মামলার মূল বিষয় হলো, প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ার বা প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার। ওবামা কেয়ারের (Obamacare) অধীনে, কিছু স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা।
এই সংক্রান্ত একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা এই স্বাস্থ্যসেবাগুলোর তালিকা তৈরি করে। আদালত যদি এই টাস্কফোর্স বহাল রাখার পক্ষে রায় দেয়, তবে তা আমেরিকাবাসীর জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার পথ আরও সুগম করতে পারে।
এছাড়াও, লুইজিয়ানার কংগ্রেসনাল জেলার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়েও একটি মামলা রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের একটি দল অভিযোগ করেছে, রাজ্যের সরকার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের জন্য দ্বিতীয় একটি জেলা তৈরি করে তাদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এই মামলার রায় কেবল লুইজিয়ানার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভবিষ্যতে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতিগত বিভাজনকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেই বিষয়েও একটি দিকনির্দেশনা দেবে।
সর্বশেষে, সাউথ ক্যারোলিনার Planned Parenthood ক্লিনিকগুলোতে মেডিকেড তহবিল বন্ধ করা নিয়েও একটি মামলা বিচারাধীন। অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, এই ক্লিনিকে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি মনে করেন, এই তহবিল “গর্ভপাত”-এর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
যদিও এই মামলার সরাসরি সম্পর্ক গর্ভপাতের সঙ্গে নয়, তবে আদালত যদি গভর্নরের পক্ষে রায় দেয়, তবে তা Planned Parenthood-এর মতো সংগঠনগুলোর আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। এর ফলে অনেক স্থানে গর্ভপাত পরিষেবা ব্যাহত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এসব গুরুত্বপূর্ণ রায় যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ এবং বিভিন্ন নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই রায়গুলোর প্রভাব শুধু বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা আমেরিকান সমাজে রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কের জন্ম দেবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন