ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেহরানে ইসরায়েলি আঘাত, গভীর হচ্ছে উদ্বেগের মেঘ
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধের দামামা। ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের সামরিক আঘাতের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর আগে, ইরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যার ফলশ্রুতিতে এই পালটা আঘাত হানা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তর্জাতিক মহলে শান্তির বার্তা দেওয়া হলেও, সংঘাত আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
সোমবার (তারিখ উল্লেখ করা যেতে পারে) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে আঘাত হেনেছে।
এর মধ্যে কুখ্যাত এভিন কারাগার এবং বিপ্লবী গার্ডের নিরাপত্তা সদর দপ্তর অন্যতম। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলের ওপর হামলার জন্য ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়েছে দেশটির ফোরদো আণবিক কেন্দ্রেও।
যদিও এই হামলায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে, ফোরদোতে আঘাত হানার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হচ্ছে।
সংঘাতের সূত্রপাত হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্যত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ফোরদো আণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, “বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহারের কারণে সেখানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলার আগেই তারা পারমাণবিক উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি গত ১৩ জুন (যদি তারিখটি প্রাসঙ্গিক হয়) জানিয়েছিলেন, ইরান পারমাণবিক সরঞ্জাম ও উপকরণ রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ‘সত্য প্রতিশ্রুতি ৩’ অভিযানের অংশ হিসেবে হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, তারা হাইফা ও তেল আবিব শহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এছাড়াও, জেরুজালেমেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইরানের সামরিক বাহিনীর চিফ অব জয়েন্ট স্টাফ জেনারেল আবদোলরাহিম মুসাভি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীকে তাদের স্বার্থ রক্ষার ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, তারা কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে তা হবে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’, এমনটা মনে করেন তিনি। কারণ, এই প্রণালী তেল পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইরান বরাবরই বলে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের তাদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দিতে রাজি হয়েছিল।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসার পর ইরান আবার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে এবং তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশাধিকারও সীমিত করে দেয়।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভ্যাডেফুল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর প্রতি ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।
তথ্য সূত্র: