ইরানে মার্কিন আঘাত: বিশ্বকে যেনো থোড়াই কেয়ার করছে ওয়াল স্ট্রিট!

শিরোনাম: ইরানকে আঘাত হানার পরও শান্ত বাজার, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানার পরেও বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র, ওয়াল স্ট্রিটে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও, শেয়ার বাজার কিংবা তেলের দামে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি।

এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এর তাৎপর্য কি, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীরা একটি ‘অনিশ্চয়তার’ মধ্যে রয়েছেন। তাদের মনে দ্বিধা কাজ করছে, কারণ সামনে কি ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

একদিকে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পরে উত্তেজনা কমে আসে এবং ইরানের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর জবাব না আসে, তবে বাজারের জন্য এটি ইতিবাচক হতে পারে। এমনটা হলে অস্থিরতা কমবে এবং ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।

অন্যদিকে, যদি এই সংঘাত আরো বাড়ে, বিশেষ করে ইরান যদি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে আবারো মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরো ঘনীভূত হতে পারে।

বাজারের এই নীরবতার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন দিক তুলে ধরছেন। কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বক্তব্য অথবা প্রতিশোধের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেই হয়তো বাজারের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার সূচকগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ডাউ ফিউচার্স ছিল অপরিবর্তিত, এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার্স সামান্য বেড়েছে ০.১ শতাংশ, এবং নাসডাক ফিউচার্সও ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার পরিস্থিতি পরিমাপের সূচক সিএনএন-এর ‘ফেয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইনডেক্স’ এখনো ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে রয়েছে।

তেলের বাজারে শুরুতে কিছুটা অস্থিরতা দেখা গেলেও, পরে তা স্থিতিশীল হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৭৪.৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও শুরুতে এই দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৭৩ ডলার, যা ১.২ শতাংশ বেড়েছে।

সংঘাতের সময় বিনিয়োগকারীরা সাধারণত নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝোঁকেন, কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। সোনার দাম সামান্য কমেছে ০.১ শতাংশ।

ট্রেজারি বন্ডের ফলনেও খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তবে, ডলারের দাম বেড়েছে ০.৭ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দাম বাড়ার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা একটি কারণ হতে পারে, তবে তেলের দাম বৃদ্ধিও এর জন্য দায়ী। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের কেনাবেচা হয় ডলারে।

ইরানের পক্ষ থেকে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির কারণে তেলের দাম আরো বাড়তে পারে এবং এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, যদি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আমদানি করা পণ্যের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা দেখা দিলে, তা দেশের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিটের এই নীরবতা হয়তো একটি বড় পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হয়তো খুব শীঘ্রই বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে, অথবা ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে।

মোটকথা, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত। এই অঞ্চলের উত্তেজনা আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *