চুল কাটার জেরে কারাগারে ধর্মভীরু ব্যক্তির মামলা, শুনবে সুপ্রিম কোর্ট!

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে এক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির প্রস্তুতি চলছে, যেখানে কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে লুইজিয়ানার একটি কারাগারে, যেখানে ড্যামন ল্যান্ডর নামের একজন রাস্টাফারি ব্যক্তিকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে পালন করা লম্বা চুল কেটে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছিল। খবরটি বর্তমানে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানা গেছে, ড্যামন ল্যান্ডর নামক এই ব্যক্তি ২০২০ সালে মাদক রাখার দায়ে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। রাস্টাফারি ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তিনি বহু বছর আগে থেকেই চুল না কাটার ব্রত নিয়েছিলেন। কারাগারে আসার কয়েক সপ্তাহ পরেই তার এই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি চরম আঘাত হানে সেখানকার কারারক্ষীরা।

ভুক্তভোগী ল্যান্ডর অভিযোগ করেন, কারাগারে আসার পর তিনি সেখানকার কর্মকর্তাদের কাছে একটি আদালতের রায় দেখান, যেখানে বলা হয়েছিল যে কারাবন্দীদের লম্বা চুল রাখার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই রায়টি তারা ছুঁড়ে ফেলে দেয় এবং এরপর তাকে একটি চেয়ারে বেঁধে জোর করে তার চুল কেটে ফেলা হয়।

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ল্যান্ডর ক্ষতিপূরণ চেয়ে লুইজিয়ানার কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি যুক্তি দেন যে, কারারক্ষীদের এই কাজ যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরনো ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন, যা কারাবন্দীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলে। তবে নিম্ন আদালত ল্যান্ডরের এই আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতের ভাষ্যমতে, ওই আইনে ক্ষতিপূরণের সুযোগ নেই।

আদালতের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ল্যান্ডর আপিল করেন। আপিল বিভাগের একটি রায়ে বলা হয়, ল্যান্ডরের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা “গুরুতর অন্যায়”। তবে আগের একটি দৃষ্টান্তের কারণে তার মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ওঠে এবং আদালত শুনানির জন্য রাজি হয়।

এই মামলার রায় শুধু ল্যান্ডরের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর মাধ্যমে কারাবন্দীদের ধর্মীয় অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিল ক্লিনটন ২০০০ সালে একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা রাজ্যের কারাগারে থাকা বন্দীদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার কথা বলে। তবে এই আইনের অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ল্যান্ডরের আইনজীবীরা বলছেন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না থাকলে বন্দীদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার কোনো মানে থাকে না।

অন্যদিকে, লুইজিয়ানার সরকারি আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলা চলতে থাকলে রাজ্যের কারাগারগুলোতে কর্মী নিয়োগে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে কারাগারের পরিবেশ আরও খারাপ হতে পারে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা কমে যেতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনও এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে তোলার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। তাদের মতে, সরকার ফেডারেল তহবিল গ্রহণকারী কারাগারগুলোতে ধর্মীয় অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়ে নজর রাখতে চায়।

এই মামলার রায় ভবিষ্যতে কারাবন্দীদের অধিকার এবং কারাগারের ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখন সবার দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *