২৫ বছরে ডোরার জয়যাত্রা: টিভির পর্দায় এক নতুন দিগন্ত!

২৫ বছর পূর্ণ করলো ‘ডরা দ্য এক্সপ্লোরার’, শিশুদের প্রিয় দুঃসাহসিক চরিত্র।

ছোট্ট একটি মেয়ে, হাতে ব্যাকপ্যাক, পরনে রঙিন পোশাক, আর মুখে সবসময় হাসি—এমন একটি চরিত্র, ডরা, টেলিভিশনের পর্দায় আত্মপ্রকাশের ২৫ বছর উদযাপন করছে। নব্বইয়ের দশকের শেষে, যখন শিশুদের জন্য মাল্টি-কালচারাল প্রোগ্রামিংয়ের ধারণা তেমন পরিচিত ছিল না, ডরা এসেছিলো এক নতুন বার্তা নিয়ে।

সে ছিলো হিস্পানিক সম্প্রদায়ের, এবং ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতো। ডরা বুঝিয়েছিলো, শিশুদের জগৎ শুধু খেলা আর হাসির নয়, বরং এখানে রয়েছে নতুন কিছু শেখার অফুরন্ত সুযোগ।

ডরা’র এই পথচলা ছিলো দৃষ্টান্তমূলক। এই কার্টুন চরিত্রটি শুধু একটি মেয়ের গল্প ছিলো না, বরং এটি ছিলো বহু সংস্কৃতির মেলবন্ধন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিস্পানিক মিডিয়া কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও ব্রেন্ডা ভিক্টোরিয়া ক্যাসটিল্লো যেমনটা বলেছেন, “এই অনুষ্ঠানটি ল্যাটিনোদের শিক্ষকের ভূমিকায় তুলে ধরেছে, যারা দর্শকদের তাদের ভাষা শেখাচ্ছিলো এবং একইসঙ্গে শিশুদের প্রয়োজনীয় সাধারণ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিলো।”

ডরা’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, প্যারামাউন্ট এবং নিকেলোডিয়ন একসঙ্গে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘ডোরা অ্যান্ড দ্য সার্চ অফ সোল ডোর‌্যাডো’, নতুন এনিমেটেড সিরিজের তৃতীয় সিজন, ‘ডোরার মারমেইড অ্যাডভেঞ্চারস’ নামের একটি পডকাস্ট এবং গানের অ্যালবাম।

প্যারামাউন্ট ও নিকেলোডিয়নের অ্যানিমেশন বিভাগের প্রেসিডেন্ট র‍্যামসি নাইটো জানান, “ডরা’র সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সে ল্যাটিন সংস্কৃতিকে উদযাপন করে—ভাষা, খাদ্য, পোশাক এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে। তবে একইসঙ্গে সে সবাইকে তাদের আসল সত্তা প্রকাশ করতে এবং সাহসী হতে উৎসাহিত করে।

ডরা’র জগৎ সবার জন্য উন্মুক্ত।”

ডরা’র কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে খ্যাতি পাওয়া ক্যাথলিন হারলেস মনে করেন, এই চরিত্রটি শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি জানান, “আমি দেখেছি, শিশুরা ডরা’র কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে।

তাদের মনে সেই মুহূর্তের স্মৃতিগুলো ফিরে আসে, যা খুবই অসাধারণ।”

ডরা’র সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে ‘গো, দিয়েগো, গো!’ এবং ‘ডোরা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস: ইনটু দ্য সিটি!’-এর মতো সিরিজ। এছাড়া, ২০১৯ সালে মুক্তি পায় লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘ডোরা অ্যান্ড দ্য লস্ট সিটি অফ গোল্ড’।

ডরা’র সহ-নির্মাতা ক্রিস গिफোর্ড বলেন, “ডরা সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে গেছে। সে সবসময় অন্যদের সাহায্য চেয়েছে এবং তার এই মানসিকতাই দর্শকদের কাছে প্রিয় হয়েছে।”

ডরা এখন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি জনপ্রিয় ‘ইনসাইড আউট ২’ ছবিতেও তার উল্লেখ রয়েছে। এই চরিত্রটি ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’-এর মতো অনুষ্ঠানেও ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

এছাড়াও, পিবিএস-এর ‘আলমাস ওয়ে’ অনুষ্ঠানে ডরা’র একটি পুতুল দেখা যায়। টিকটক ব্যবহারকারীরাও ‘ব্যাকপ্যাক সং’ নিয়ে মেতে উঠেছে।

ডরা শুধু একটি কার্টুন চরিত্র নয়, বরং এটি একটি আন্দোলনের নাম। এটি শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে, নতুন কিছু জানতে উৎসাহিত করেছে এবং ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখিয়েছে।

যারা ২৫ বছর আগে ছোটবেলায় এই কার্টুনটি দেখে বড় হয়েছে, তারা এখনো ডরাকে ভালোবাসে এবং তাদের স্মৃতিতে ডরা অমলিন হয়ে আছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *