ভয়ংকর সত্যি! গরমের সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতা, বাড়ছে বিপদ!

গরম বাড়ছে, বাড়ছে আর্দ্রতাও: কেমন হবে আমাদের ভবিষ্যৎ?

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতাও। গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতা বাড়ার একটি প্রধান কারণ হল এই আর্দ্রতা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৪০ বছরে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর দেশে এর প্রভাব আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

আর্দ্রতা আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলা হয়। গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন পুকুর, নদী, খাল-বিল, এমনকি সমুদ্রের জলও বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। এই জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যত বেশি, আর্দ্রতা তত বেশি হয়। ফলে গরমের সময় শরীর থেকে ঘাম বের হলেও, তা সহজে শুকাতে পারে না, কারণ বাতাসের জলীয় বাষ্পের কারণে ঘাম বাষ্পীভূত হতে বাধা পায়। এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তি আরও বাড়ে এবং গরম বেশি অনুভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেস প্রোগ্রামের পরিচালক জেমস মার্শাল শেফার্ডের মতে, “বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে আর্দ্রতাও বেশি হয়।”

আর্দ্রতা কেন এত ক্ষতিকর? যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশটি ঘর্মগ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে। ঘামের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা হয়। কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে, ঘাম শুকোতে পারে না। ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে না এবং গরম আরও বেশি লাগে।

বিশেষজ্ঞরা ‘ওয়েট বাল্ব এফেক্ট’-এর কথা উল্লেখ করেন। ‘ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা’ হলো এমন একটি পরিমাপ, যা গরম ও আর্দ্র পরিবেশে শরীরের শীতল হওয়ার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। যখন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা উভয়ই বেশি থাকে, তখন শরীর পর্যাপ্তভাবে ঠান্ডা হতে পারে না। এর ফলে হিট স্ট্রোক বা হিট এক্সজশন-এর মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৫০ ফারেনহাইট)-এর বেশি তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

নিউ হ্যাম্পসায়ারের স্টেট ক্লাইমাটোলজিস্ট এবং ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেরি ডি. লেমকে-স্ট্যাম্পোনের মতে, “শরীর দ্রুত ঠান্ডা না হতে পারলে, হিট স্ট্রেসের লক্ষণগুলো আরও বেশি অনুভূত হয়।”

আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণ কী? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের জল ধারণ ক্ষমতাও বাড়ে, যার ফলে আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৪০ বছরে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে হিট ওয়েভ-এর তীব্রতা বাড়িয়েছে। এছাড়া, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে নদ-নদী, খাল-বিলের জল বেশি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশছে, যা আর্দ্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

আর্দ্রতা বাড়ার কারণে রাতের বেলাতেও গরম কমছে না। শহরের কংক্রিট ও অ্যাসফল্টের কারণে তাপ আটকা পড়ে থাকে, যা রাতের বেলায়ও গরমের অনুভূতি বাড়ায়। নাসা গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ ও সেন্টার ফর ক্লাইমেট সিস্টেমস রিসার্চ-এর জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালেগ্রা এন. লেগ্রান্ডে বলেন, “উচ্চ রাতের তাপমাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।”

করণীয় কী? গরম ও আর্দ্রতা থেকে বাঁচতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে জল পান করা, হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরা, ফ্যান ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে শীতল স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত। এছাড়া, আপনার এলাকার শীতল কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো, যা গরম থেকে বাঁচতে সহায়তা করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বয়স্ক বা অসুস্থ ব্যক্তিরাই নন, তরুণ প্রজন্মের মানুষও এই গরমে ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ, অনেকেই এই সময়ে বাইরে কাজ করতে বাধ্য হন।

আর্দ্রতা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *