ফ্লোরিডার সমুদ্রবেষ্টিত এক অসাধারণ উদ্যান: বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক একটি অনন্য স্থান, যা জল ও প্রকৃতির এক চমৎকার মিশ্রণ। এই উদ্যানের প্রায় ৯৫ শতাংশ জুড়েই রয়েছে জলরাশি, যা একে অন্যান্য জাতীয় উদ্যান থেকে আলাদা করে তোলে।
যারা জল ভালোবাসেন, বন্যজীবন দেখতে পছন্দ করেন, অথবা সমুদ্রের শব্দ শুনতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্কের প্রধান আকর্ষণগুলো হলো এখানকার ম্যানগ্রোভ অরণ্যে কায়াকিং, ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে স্কুবা ডাইভিং এবং বিভিন্ন দ্বীপে ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো এখানকার ম্যানগ্রোভ বনও এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে যাবেন?
বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্কে যাওয়ার প্রধান উপায় হলো জলপথ। আকাশপথে যেতে চাইলে, নিকটতম বিমানবন্দর হলো মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MIA)।
বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন পার্কটিতে, যা ফ্লোরিডার হোমস্টেডে অবস্থিত। সাধারণত, পর্যটকদের জন্য এখানকার প্রধান প্রবেশদ্বার হলো ড্যানটে ফাসসেল ভিজিটর সেন্টার।
পার্কে নৌকায় করে ঘোরার জন্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের গাইড ট্যুর পাওয়া যায়। এছাড়াও, আপনি যদি নিজের নৌকো নিয়ে যেতে চান, তাহলে বোকা চিটা এবং এলিয়ট কীতে নৌকো ভেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
ক্যাম্পিং এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্কে ক্যাম্পিং করারও সুযোগ আছে। এলিয়ট কী এবং বোকা চিটা কী – এই দুটি দ্বীপে ক্যাম্পিং করার ব্যবস্থা রয়েছে।
বোকা চিটা কী অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয়, যেখানে সুন্দর দৃশ্য, ঘাসযুক্ত এলাকা এবং পিকনিক করার স্থান রয়েছে। তবে এখানে গোসলের ব্যবস্থা বা পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।
এলিয়ট কী তুলনামূলকভাবে বড় এবং এখানে বাথরুম, ঠান্ডা জলের ঝর্ণা এবং খাবার জলের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যাম্পিংয়ের জন্য প্রতিদিন ৩৫ মার্কিন ডলার খরচ হয়, এবং নৌকো ভেড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ২৫ মার্কিন ডলার দিতে হয়। (ধরুন, ১ মার্কিন ডলার = ১১০ টাকা হলে, ক্যাম্পিংয়ের খরচ হয় প্রায় ৩,৮৫০ টাকা)।
কখন যাবেন?
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়টি বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক ভ্রমণের জন্য সেরা। এই সময়ে দক্ষিণ ফ্লোরিডায় শুষ্ক আবহাওয়া থাকে, যা নৌকাবিহার, স্নোরকেলিং বা কায়াকিংয়ের জন্য খুবই উপযুক্ত।
তাপমাত্রা থাকে বেশ আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালে এখানে আর্দ্রতা বাড়ে এবং বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, যারা শান্ত পরিবেশে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়টা ভালো।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়
পার্কে প্রবেশের কোনো ফি নেই, তবে বোট ট্যুর, সরঞ্জাম ভাড়া এবং বোকা চিটা ও এলিয়ট কীতে নৌকো ভেড়ানোর জন্য অর্থ দিতে হয়। ভ্রমণের আগে সানস্ক্রিন, পর্যাপ্ত জল এবং খাবার সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
খাবার কোথায় পাবেন?
পার্কের ভেতরে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। তাই, নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো। আপনি চাইলে ড্যানটে ফাসসেল ভিজিটর সেন্টার, এলিয়ট কী এবং বোকা চিটা কী-তে উপলব্ধ গ্রিলিং সুবিধাযুক্ত স্থানে বারবিকিউ করতে পারেন।
পার্কের কাছাকাছি ইয়াদি স্পাইস (Yardie Spice) নামক একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি জ্যামাইকান খাবার উপভোগ করতে পারবেন।
বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি। এখানকার স্বচ্ছ নীল জল, প্রবাল প্রাচীর এবং ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসাবশেষ এটিকে করে তুলেছে একটি বিশেষ স্থান।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন এবং জলকে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই পার্ক হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার