নৌকায় করে উত্তর কোরিয়াতে চাল ও বাইবেল পাঠাতে গিয়ে ৬ আমেরিকান আটক!

উত্তর কোরিয়ায় চাল, বাইবেল ও ডলার পাঠানোর চেষ্টার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬ মার্কিন নাগরিক আটক

সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া – উত্তর কোরিয়ার দিকে সমুদ্রপথে ১,৬০০ বোতল চাল, মার্কিন ডলার এবং বাইবেল পাঠানোর চেষ্টা করার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছয় জন মার্কিন নাগরিককে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার দেশটির পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আটককৃত ব্যক্তিরা দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী কোয়াংহোয়া দ্বীপ থেকে সমুদ্রে বোতলগুলো ভাসানোর চেষ্টা করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, জোয়ারের টানে সেগুলো উত্তর কোরিয়ার উপকূলে পৌঁছাবে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

আরেকজন দক্ষিণ কোরীয় পুলিশ কর্মকর্তা আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, আটকদের মধ্যে কেউ আগে উত্তর কোরিয়ায় এ ধরনের কিছু পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, সে বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘদিন ধরেই কোরীয় উপদ্বীপের সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার দিকে বেলুন বা প্লাস্টিকের বোতলে করে প্রচারপত্র পাঠানোর মতো ঘটনা উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছে। অতীতে এর প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়াও তাদের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে আবর্জনা ভর্তি বেলুন পাঠিয়েছে, যা সিউলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেও এসে পড়েছিল।

২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত ২০২০ সালের একটি আইনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, যেখানে উত্তর কোরিয়ায় প্রচারপত্র পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। আদালত এই আইনকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে।

এদিকে, চলতি বছরের জুন মাসের শুরুতে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে এবং সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাইছে। প্রেসিডেন্ট লি জায়ে-মিয়ুংয়ের সরকার সীমান্ত অঞ্চলে বেসামরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্যান্য আইন প্রয়োগের দিকে ঝুঁকছে। গত ১৪ জুন, কোয়াংহোয়া দ্বীপ থেকে উত্তর কোরিয়ার দিকে বেলুন ওড়ানোর অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট লি জায়ে-মিয়ুং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা কমাতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বিরোধী প্রচারণার জন্য লাউডস্পিকারের ব্যবহারও বন্ধ করেছেন। তবে উত্তর কোরিয়া এখনো পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার এই পদক্ষেপের প্রতি কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এমনকি তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে একত্রীকরণের লক্ষ্য থেকে সরে আসারও ঘোষণা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার পর দুই কোরিয়ার মধ্যে সরকারি আলোচনাও বন্ধ রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *