যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বেন রেনিক নামের এক সরীসৃপ পালনকারীর মৃত্যু হয়। প্রথমে এটিকে একটি সাপের কামড় হিসেবে ধারণা করা হলেও, পরে জানা যায় যে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেন রেনিকের স্ত্রী লিনলি রেনিক এবং তার প্রাক্তন প্রেমিক মাইকেল হামফ্রেকে অভিযুক্ত করা হয়।
বেন রেনিক পেশায় ছিলেন একজন খ্যাতনামা সরীসৃপ পালনকারী। নিউ ফ্লোরেন্স, মিসৌরিতে অবস্থিত রেনিক রেপটাইলস নামের তার খামারে তিন হাজারের বেশি সাপ ছিল।
জানা যায়, তিনি নিয়মিতভাবে এই সাপগুলো বিক্রি করতেন এবং এর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। ঘটনার দিন, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৮ জুন, বেনকে তার খামারে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
তার স্ত্রী লিনলি রেনিকই প্রথম তাকে দেখতে পান। দ্রুত তিনি বেনের ভাই স্যাম রেনিককে খবর দেন এবং তারা দুজনেই জরুরি বিভাগে ফোন করেন।
শুরুতে, স্যাম রেনিক ধারণা করেছিলেন যে সাপের কামড়েই হয়তো বেনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা খুঁজে পান।
এরপরই আসল ঘটনা প্রকাশ পায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, বেনকে আটবার গুলি করা হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।
তদন্তের এক পর্যায়ে বেনের স্ত্রী লিনলি রেনিকের দিকে সন্দেহের আঙুল ওঠে। জানা যায়, লিনলির অন্য সম্পর্ক ছিল এবং তিনি তার প্রাক্তন প্রেমিক মাইকেল হামফ্রের সঙ্গে মিলে বেনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লিনলি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ঘটনার তিন বছর পর, তদন্তকারীরা ব্রেন্ডন ব্ল্যাকওয়েল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। ব্ল্যাকওয়েল জানান, বেনকে হত্যার পরে লিনলি তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এবং হত্যার বিষয়ে লিনলি তাকে সব কথা বলেছিলেন।
ব্ল্যাকওয়েলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি লিনলি রেনিক এবং মাইকেল হামফ্রেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার শুনানিতে, মাইকেল হামফ্রে এবং লিনলি একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। হামফ্রে দাবি করেন, লিনলিই বেনকে গুলি করেছিলেন।
অন্যদিকে, লিনলি জানান, হামফ্রে তাকে মারধর করে এবং তিনিই বেনকে গুলি করেন।
আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষে, মাইকেল হামফ্রেকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে পরে তার সাজা কমিয়ে দ্বিতীয়-ডিগ্রি করা হয়। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তবে প্যারোলের সুযোগ ছিল।
অন্যদিকে, লিনলি রেনিককে দ্বিতীয়-ডিগ্রি হত্যা এবং সশস্ত্র অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বেন রেনিকের ভাই স্যাম রেনিক এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানান, লিনলি সবকিছু থেকে বাঁচতে চেয়েছিল এবং তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর সে যা চেয়েছিল, তা পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এই ঘটনাটি ভালোবাসার নামে হওয়া একটি ভয়ংকর অপরাধের উদাহরণ, যা আজও মানুষকে নাড়া দেয়।
তথ্য সূত্র: পিপল