মরুভূমিতে এক হাতের রহস্য! চমকে দেওয়া গল্প!

আটাকামা মরুভূমি, পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল পাথরের ভাস্কর্য, যা ‘মরুভূমির হাত’ নামেই পরিচিত।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বালির বুক চিড়ে উঠে আসা এক বিশাল মানব হাত, যা দর্শক এবং অনলাইন ব্যবহারকারীদের মনে একই প্রশ্ন জাগায় – কে তৈরি করেছে এটি? কেনই বা এটি এখানে? আর এর অর্থই বা কি?

আসুন, এই ‘মরুভূমির হাত’-এর আশ্চৰ্যজনক গল্পটি এবং কেন এটি আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে, সেই বিষয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।

চিলির এই মরুভূমিতে একটি হাতের জন্ম :

১৯৯২ সালে, চিলির শিল্পী মারিও ইরারাজাবাল তৈরি করেন ‘লা মানো দেল দেসিয়ের্তো’, অর্থাৎ ‘মরুভূমির হাত’। এরপর থেকেই এটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে, যা সারা বিশ্ব থেকে আসা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

ইরারাজাবাল ১৯৪০ সালে চিলির সান্টিয়াগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা এবং ইতালির রোমে পড়াশোনা করেন।

জার্মানির প্রখ্যাত ভাস্কর অটো ওয়াল্ডেমারের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে, তিনি ১৯৭০ সালে প্রথম বড় শিল্প প্রদর্শনী করেন।

ইরারাজাবাল তাঁর গভীর ভাবপূর্ণ, অভিব্যক্তিপূর্ণ মানবতাবাদী ভাস্কর্যগুলির জন্য পরিচিত, যেখানে একাকীত্ব অথবা অবিচারের মতো বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলা হয়।

তবে, হাতের ভাস্কর্যগুলো ইরারাজাবালের বিশেষত্ব।

আসলে, চিলির মরুভূমির হাত তাঁর তৈরি করা বহু হাতের ভাস্কর্যের মধ্যে একটি। ইতালী, স্পেন এবং উরুগুয়ের মতো দেশেও তাঁর এমন কাজ রয়েছে।

এইগুলির মধ্যে ‘মরুভূমির হাত’ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় এবং সুপরিচিত কাজ।

আটাকামা মরুভূমির হাতের প্রতীক :

এই ভাস্কর্যটির কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই। ইরারাজাবাল চেয়েছিলেন, প্রতিটি দর্শক যেন তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা খুঁজে পান।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এর কিছু সাধারণ ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে। অনেকের কাছে, এটি মানুষের দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতার প্রতীক।

আবার কেউ কেউ একে মানবজাতির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা, প্রতিকূলতা জয় করার প্রতীক হিসেবেও দেখেন।

এই প্রসঙ্গে, ইরারাজাবালের আরেকটি বিখ্যাত ভাস্কর্যের কথা বলা যেতে পারে। উরুগুয়ের পুন্টা দেল এস্তায় সমুদ্র সৈকতে একটি ডান হাতের ভাস্কর্য রয়েছে (উপরে ছবি দেওয়া হল)।

ধারণা করা হয়, এই দুটি হাত যেন দক্ষিণ আমেরিকাকে ধরে রেখেছে – যেন প্রকৃতির দুই হাত।

একটি বাতিল হওয়া কারখানার ভাস্কর্য থেকে কিভাবে জন্ম হলো মরুভূমির এই নিদর্শনের :

এই ভাস্কর্যটি তৈরির মূল পরিকল্পনা ছিল চিলির লস আন্দেসে অবস্থিত একটি স্থানীয় সিমেন্ট কারখানার সামনে স্থাপন করার জন্য।

ইরারাজাবাল তাঁর নকশা তৈরি করার কাজ শুরু করেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে যায় এবং প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।

কিন্তু ইরারাজাবাল এই ধারণাটি খুব পছন্দ করেছিলেন। তাই তিনি হাল ছাড়েননি।

তিনি তাঁর প্রকৌশলী বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের সহায়তা চান।

এরপর অর্থ সংগ্রহের কাজটি আসে। স্থানীয় একটি সংস্থা, কর্পোরেশন প্রো আন্তোফাগাস্তা, চিলির আন্তোফাগাস্তা অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অর্থ দেয়।

১১ মিটার (৩৬ ফুট) উঁচু এই ভাস্কর্যটি মরুভূমির মধ্যে তৈরি করা হয়, যার জন্য লোহার কাঠামো তৈরি করে তার উপর কংক্রিট ঢালা হয়।

পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছিল, যেখানে কর্মীরা হাতে করে প্রতিটি আঙুল এবং রেখা তৈরি করেছেন।

এর দৃঢ় কাঠামোর কারণে এটি সম্ভবত বহু বছর ধরে টিকে থাকবে।

‘লা মানো দেল দেসিয়ের্তো’ (মরুভূমির হাত)-এ যেতে যা জানা দরকার :

আপনি যদি চিলি ভ্রমণে যান, তবে ‘মরুভূমির হাত’ দেখতে যেতে পারেন। এটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে অবস্থিত হলেও, খুঁজে বের করা কঠিন নয়।

বেশিরভাগ দর্শক প্রথমে কাছের শহর আন্তোফাগাস্তায় যান, যা এই স্থান থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৬ মাইল) দূরে অবস্থিত।

আন্তোফাগাস্তা থেকে একটি শাটল বা ট্যাক্সি ধরে দক্ষিণে গেলে সরাসরি ‘লা মানো দেল দেসিয়ের্তো’-তে পৌঁছানো যায়।

সেখানে পৌঁছে আপনি ছবি তুলতে পারেন এবং নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারেন।

তবে, মনে রাখতে হবে, ভাস্কর্যের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। যাতে অন্যরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

‘মরুভূমির হাত’-এর আসল অর্থ হয়তো এখনো অজানা।

সম্ভবত শিল্পী মারিও ইরারাজাবালের এটাই উদ্দেশ্য ছিল – প্রতিটি দর্শক যেন তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা খুঁজে নেয়।

সুতরাং, আপনি যদি কখনও এই বিখ্যাত ‘মরুভূমির হাত’-এর সামনে দাঁড়ান, তবে এর কথা শুনুন – হয়তো আপনি একটি নতুন দৃষ্টিকোণ খুঁজে পাবেন!

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *