বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ: পৃথিবীর বুক থেকে ৯০ শতাংশ প্রাণের বিলুপ্তি, আর তার কারণ?
আজ থেকে ২৫ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগে, এক ভয়াবহ বিপর্যয়ে পৃথিবীর বুকে প্রাণের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন হয়ে গিয়েছিল। ‘বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ’ নামে পরিচিত সেই ঘটনায় প্রায় ৯০ শতাংশ জীব প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই এই ঘটনার কারণ জানতে চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি একদল গবেষক সেই রহস্য উন্মোচন করেছেন, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ব্যাপক ধ্বংসের মূল কারণ ছিল উষ্ণতা বৃদ্ধি। সেই সময়টাতে পৃথিবীর তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, যা প্রায় ৫০ লক্ষ বছর ধরে স্থায়ী ছিল। লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা ফসিল বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তাঁদের মতে, এই ঘটনার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে ক্রান্তীয় বনভূমির।
গবেষকরা চীনের ফসিল ডেটা ব্যবহার করে গবেষণা করেছেন। এই ডেটা কয়েক দশক ধরে চীনা ভূতত্ত্ববিদদের তিনটি প্রজন্মের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
তাঁরা অতীতের জলবায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে জীবাশ্ম এবং শিলা গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বিলুপ্তি ঘটনার আগে, সেই সময়ে এবং পরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের গাছপালা ও বনভূমির মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাপক বিলুপ্তি ঘটনার সময় গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পৃথিবীর কার্বন ধারণের ক্ষমতা কমে যায়। ফলে, বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বনভূমি কার্বন শোষণ করে জলবায়ুকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, শিলা ও বৃষ্টির পানির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে কার্বন অপসারণেও বনভূমি সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেলে কার্বন চক্রে পরিবর্তন আসে, যা উষ্ণতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণা বলছে, বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেলে তা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে উদ্বিগ্ন যে দ্রুত হারে বিশ্ব উষ্ণায়ন হলে ভবিষ্যতে ক্রান্তীয় বৃষ্টিপাতের বনভূমিগুলোও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
যদি এমনটা হয়, তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমার বদলে আরও বাড়তে শুরু করবে।
এই গবেষণা থেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে আমাদের ক্রান্তীয় বনভূমিগুলোর কি হতে পারে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সুন্দরবনের কথা বলা যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে আজ হুমকির সম্মুখীন।
বর্তমানে, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি কমানো যায়। কিন্তু বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়।
তাই, এই গবেষণা আমাদের সতর্ক করে যে বনভূমিকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন